ওলো সই
আত্মীয়স্বজনে পূর্ণ কলরবমুখরিত বৃহৎ একান্নবর্তী পরিবারের কনিষ্ঠা বধূ হিসাবে নয় বছরের বালিকা ভবতারিণী (মৃণালিণী) যেদিন জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে পা রেখেছিলেন, সেদিন ভাবতেও পারেন নি যে অচিরেই এই বিশাল মহীরুহের দায়িত্ব নিতে হবে তাঁকেই। ঠাকুরবাড়ির ঐতিহ্যে অনুসারে বেশ কয়েক বছর প্রথাগত শিক্ষা ও শহুরে আদবকায়দা রপ্ত করবার পরে গৃহিণীত্বের ভার পেয়ে মৃণালিণী ভীষণ খুশি। তিনি ছিলেন প্রকৃত সুগৃহিণী, মিশুকে, বন্ধুবৎসল আর ভালোবাসতেন সবাইকে নিয়ে আনন্দে হৈ চৈ করে থাকতে।
১৮৮৯ সালে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদারি দেখাশুনা করবার জন্য রবীন্দ্রনাথকে শিলাইদহে পাঠিয়েছিলেন। প্রথম কয়েক বছর রবীন্দ্রনাথ সেখানে একা থাকলেও ১৮৯৫ সাল থেকে স্ত্রী ও পুত্রকন্যাদের নিয়ে শিলাইদহে কুঠিবাড়িতে সপরিবারে বাস করেছেন। জোড়াসাঁকোর তুলনায় কুঠিবাড়িতে লোকজন, চাকরবাকর কম। হৈ হল্লা নেই বললেই চলে। নির্জনতা আর নিঃসঙ্গতায় মৃণালিণীর প্রাণ হাঁপিয়ে উঠছে। এমন সময়ে একদিন শিলাইদহের এসে হাজির হলেন তাঁর প্রিয় সখী চিত্তরঞ্জন দাসের ভগ্নী অমলা দাস (১৮৭৭-১৯১৯) । জোড়াসাঁকোর বাড়িতে অমলার ছিল অবাধ যাতায়াত। বলা যায় তিনি প্রায় রবীন্দ্র পরিবারভুক্তই হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর স্কুলের মাইনে , খাতাপত্র জুতো ইত্যাদির খরচ ঠাকুরবাড়ি থেকেই দেওয়া হত।
প্রায় সমবয়স্ক দুই সখীর মধ্যে গড়ে উঠেছিল প্রগাঢ় বন্ধুত্ব। তাই শিলাইদহে অমলাকে পেয়ে মৃণালিণী যেন হাতে স্বর্গ পেলেন। দুই সখীর গল্প আর হাসিঠাট্টায় ভরে উঠেছিল কুঠিবাড়ির নির্জন পরিবেশ। এই দুজনের কাণ্ড দেখে রবীন্দ্রনাথ লিখে ফেললেন ‘ওলো সই আমার ইচ্ছা করে তোদের মত মনের কথা কই’ গানটি। এ প্রসঙ্গে সাহানা দেবী লিখেছেন, ‘শিলাইদহের কবি যখন সপরিবারে বাস করতেন তখন মাসিমাও (অমলা দাস) ওঁদের সঙ্গে প্রায়ই থাকতেন। কবিপত্নীর সঙ্গে ছিল মাসিমার সবচেয়ে বেশী ভাব। তাঁকে কাকিমা বলে ডাকতেন। এই দুই সখীর একত্রে বসে গল্পালাপাদির একটি চিত্র আছে রবীন্দ্রনাথের গানে। গানটি হচ্ছে ওলো সই, ওলো সই। …. এই গানটির কথা মাসিমার মুখেই শুনেছি আর গানটিও তাঁকে অনেকবার গাইতে শুনেছি’।
গানটি রবীন্দ্রনাথকেও নানা উপলক্ষে গাইতে দেখা গিয়েছে। অধ্যাপক সুশোভন সরকার জানিয়েছেন যে তখনকার দিনে সুকুমার রায়, প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ ও আরো কিছু তরুণ ব্রাহ্মরা ‘সোশ্যাল ফ্রেটারনিটি’ নামে একটি সংগঠন তৈরি করেছিলেন। এই সংগঠনের সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে প্রভাতকুসুম রায়চৌধুরী মহাশয়ের বাড়ির উন্মুক্ত ছাদে বৈঠক বসত। সেই ছাদে একদিন রবীন্দ্রনাথ এলেন, সঙ্গে ইন্দিরা দেবী। সেখানে রবীন্দ্রনাথ এই গানটি গেয়েছিলেন। প্রশান্তকুমার পালের অনুমান ‘গানটির মধ্যে উভয়ের বিশ্রাম্ভালাপের প্রতি সকৌতুক ইঙ্গিত থাকতে পারে, কিন্তু এই সময়ে তাঁরা কলকাতাতেই ছিলেন, শিলাইদহে আসেন কয়েকদিন পরে’।
অন্যান্য তথ্য | রচনাকাল ২১ সেপ্টেম্বর ১৮৯৫ | রচনাস্থান শিলাইদহ | কবির বয়স ৩৪ বছর | পর্যায় প্রেম | কবিকৃত ইংরাজি অনুবাদ : Friend I wish had some secret on my own (THE FUGITIVE)
এই তথ্যটি অনেকেই জানেন কিন্তু স্থানটি নিয়ে এক একজনের এক এক রকম মত দেখা যায়। আপনার উল্লেখিত স্থানটিই সঠিক। কেউ কেউ শান্তিনিকেতনে এই গানটি রচিত বলে মনে করেন। কিন্তু সেটি ঠিক নয়। ধন্যবাদ আপনাকে। আমি পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত জায়গায় পূজায় এসেছি বলে নেটের সমস্যায় বিচ্ছিন্ন হয়ে আছি। শুভ বিজয়া। ভালো থাকুন।