আমাদের কথা
নমস্কার। বেশ কয়েক বছর অন্তরালে থাকবার পরে আবার নতুন করে শুরু হল জনপ্রিয় শনিবারের ব্লগ। কোভিড-যুগে প্রতি শনিবার সকাল ঠিক ন’টায় পাঠকের মোবাইলে ভেসে উঠত সেই সপ্তাহের শনিবারের ব্লগ। ক্যুইজ, গল্প, গান, সাময়িক সংবাদ, পুস্তক পরিচয়, স্বাস্থ্য-ভাবনা, কবিকথা, ছবি, কবিতা, প্রশ্নোত্তর, নিয়ে সাজানো শনিবারের ব্লগটি যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।
এবার শুরু হল তার সপ্তম পর্ব। ব্লগের মূল আকর্ষণ শনিবারের ক্যুইজ। প্রতি সপ্তাহে একটি সহজ ক্যুইজ থাকবে। উত্তরদাতা সঠিক উত্তরের জন্য ৫টি পয়েন্ট অর্জন করবেন।
সরাসরি আমাদের WhattsApp নম্বরে (8240498040) আপনার উত্তর পাঠানো যাবে। অথবা ইমেল করেও পাঠানো যেতে পারে।
আমাদের Email : pbsarkar@gmail.com
যারা প্রথম সর্বাধিক ৮০ পয়েন্ট অর্জন করবেন, তাদের সল্টলেকের চিরন্তনী সভাঘরের চা-পানের আসরে আপ্যায়িত করা হবে। সঙ্গে থাকবে বিশেষ প্রীতি উপহার।
ব্লগটি আপনার ভালো লাগলে আপনার পরিচিত জনেদের শেয়ার করবার অনুরোধ রইল। আর প্রতি শনিবার সকালে ‘শনিবারের ব্লগ’এ চোখ রাখলে ভীষণ খুশি হব।
নমস্কার।
ডা. পূর্ণেন্দুবিকাশ সরকার
১৯৬১ সালে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কবির স্মৃতি, চিন্তাভাবনা ও সৃষ্টিকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরবার লক্ষ্যে এই প্রাঙ্গণেই প্রতিষ্ঠা করেছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, —যার প্রতিটি ইট যেন কবির কল্পলোকের এক একটি স্তম্ভ। পরে ২০১১ সালে, ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অন্তর্গত আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (ASI) এই ভবনের সংরক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই পদক্ষেপ এক বিশাল ঐতিহ্যের প্রতি জাতির ঋণস্বীকার। জোড়াসাঁকো তাই আজ শুধুই একটি বাড়ি নয়—একটি ইতিহাস, এক বিস্ময়, এক ধ্রুপদ ঐকতান। এখানে সঞ্চিত রয়েছে ভারতীয় রেনেসাঁসের স্পন্দন, বাঙালি মননের আলোকরেখা।
The Telegraph, 1 Februaty 2011
ASI takes over Tagore house restoration reins
The Archaeological Survey of India (ASI) will take over the restoration of Jorasanko Thakurbari from Rabindra Bharati University, whose attempts over the past two years at restoring one of the cradles of Bengal renaissance have earned more flak than praise.
Restoring Thakurbari can be tricky because there is no building plan to follow. “References in various writings of the Tagores are the only guide…. If a partition had been erected by a later Tagore then that, too, is part of Thakurbari’s history and should not be demolished,”
উত্তর কলকাতার চিৎপুর সংলগ্ন প্রায় পঁইত্রিশ হাজার বর্গমিটার জুড়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এর অবস্থান। তবে প্রথমে শুরু হয়েছিল মাত্র এক বিঘে জমির উপরে নির্মিত ছোট্টো একটা ঘর দিয়ে। আর সেই ইতিহাসও অত্যন্ত চমকপ্রদ। উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে বাংলার সাহিত্য-সংস্কৃতি তার খোলনোলচে বদলিয়ে এক যুগান্তকারী বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে নিজেকে নতুন করে মেলে ধরেছিল। সেই ঊষালগ্নের প্রদীপ যিনি জ্বালিয়েছিলেন, সূচনা করেছিলেন বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির নবজাগরণের ইতিহাস, তিনি ঠাকুর বংশের পুর্বপুরুষ নীলমণি ঠাকুর, এই বিশাল স্থাপত্যের মূল কারিগর। তাঁর ‘এক বিঘে জমির ক্ষুদ্র স্বপ্ন’ একদিন সজীব হয়ে উঠেছিল জীবনের নানা রঙে। সেই নির্মাণ ধীরে ধীরে, শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে এক বিশাল মহীরুহের আকার নিয়েছিল, যার ছায়ায় আশ্রয় খুঁজেছিল জ্ঞান, সৌন্দর্য ও সৃষ্টির শতধারা। রেনেসাঁ যুগের ঠিক প্রাক্কালে, ঠাকুরবাড়ির ঐতিহ্য ও আভিজাত্য এক দীপ্তিমান দীপশিখার মতো আলো ছড়িয়েছিল চারিদিকে। চিৎপুরের প্রাচীন পথ ছাপিয়ে সেই আলো পৌঁছে গিয়েছিল কলকাতার অলিগলি থেকে শুরু করে দেশের প্রান্তপ্রাচীরে, এমনকি বিদেশের অন্তঃপুরেও। ব্যবসার কুশলতা, সাহিত্যভাবনা, সংগীতচর্চা, নাট্যকলার উৎকর্ষ, শিল্পবোধ আর দার্শনিক চেতনার এক অপরূপ সম্মিলন ঘটেছিল এই বাড়ির প্রাচীরের ভিতরে। তবে সময়ের প্রবাহ সব কিছুকেই গ্রাস করে নেয়। ধীরে ধীরে সেই কীর্তির দিনগুলির বুকের ওপর জমে উঠল ক্লান্তির ছায়া। মানুষের স্বার্থপরতা, কোলাহল, কূটকচালি আর নিরন্তর বিবাদের ধুলোতে ম্লান হতে লাগল সুদিনের সেই স্মৃতি। গৌরব হারিয়ে, উৎসব স্তব্ধ হয়ে, প্রাচীন ঐতিহ্য ঢেকে গেল অবক্ষয়ের ঘন অন্ধকারে। চিরকালীন বসন্ত আর হাসিখেলা একদিন নিঃশব্দে বিদায় নিয়েছিল জোড়াসাঁকোর অঙ্গন থেকে।
অজানার পথে
১৭৮৪ সাল। গ্রীষ্মের এক ভয়ংকর দুপুর। আকাশে একটুকরো মেঘ নেই। সূর্য যেন তার সমস্ত তেজ দিয়ে পৃথিবীকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে চাইছে। বাতাসে আগুনের ছটা। পাখি-পাখালিরা গাছের ঘন ডালপালার আড়লে নিজেদের লুকিয়ে রাখবার ব্যার্থ চেষ্টায় দিশাহারা, নিশ্চুপ। রাখালের বাঁশির সুর কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে! গবাদি পশুদের চারণভূমি আজ যেন তপ্ত মরুভূমি। এখানে ওখানে ঝোপঝাড়ের আড়ালে কুকুরগুলো লম্বা জিভ বের করে হাঁপিয়ে সারা। সেই দুঃসহ দুপুরে, আঁকাবাঁকা খানাখন্দে ভরা কাঁচা পথ ধরে ক্লান্ত পায়ে হঁটে চলেছেন এক প্রৌঢ় ব্রাহ্মণ। বয়স ষাটের কাছাকাছি। দুচোখে কেবল হতাশা আর শূন্যতা। নিজের ভাইয়ের কাছে প্রতারিত হয়ে, অনেক অভিমানে ঘর ছেড়ে চলেছেন অজানার পথে, একবস্ত্রে। সঙ্গে পুত্র-পরিবার আর গৃহদেবতা লক্ষ্মীজনার্দন। যে ঘর ছেড়ে আজ তিনি অনিশ্চয়তার পথে নেমেছেন, সে ঘর নির্মাণের পিছনে রয়েছে নিজের তাঁর পরিশ্রম আর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আয় করা কষ্টের অর্থ। শুধু ঘরই নয় ফেলে এসেছেন সারাজীবনের সঞ্চয়, যাবতীয় পুরোনো স্মৃতি, বন্ধুবান্ধব আর আত্মীয়জনেদের। জানেন না সন্তানদের নিয়ে কোথায় রাত্রিযাপন করবেন, আহারেরই বা কি হবে। সামনে শুধুই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কালো অন্ধকার। এই অন্ধকার শুধু চোখে নয়, – মনেও, ভবিষ্যতের আকাশজুড়ে ঝুলে থাকা এক বিপন্ন প্রতীক্ষা। বেলা পড়ে আসছে। ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর যাত্রীদের হঠাৎ চোখের পড়ল টলটলে জলে ভরা পুকুরঘাট আর পাশের ছায়াঘেরা তেঁতুল গাছটার দিকে। যেন ভগবান মরূদ্যান সাজিয়ে রেখেছেন পথক্লান্ত পথিকদের জন্য। ক্ষণিক বিশ্রামের আশায় সকলে আশ্রয় নিলেন সেই ছায়াতলে। পুজা করলেন গৃহদেবতার, সামান্য কিছু আহারের পরে চোখে নেমে এল তন্দ্রার ঘোর।
কবিকথা
“এত অনাদরে মানুষ হয়েছি, কেউ দেখত না আমাদের । ভালোই এক হিসাবে। সবপ্রথম বড়দি, তার পরেই নতুন বোঠান আমাকে কাছে টেনে নিলেন। সেই প্রথম আমি যেন জীবনে আদরযত্ন পেলুম ৷এত দুর্মূল্য সেটা লেগেছিল তা বলতে পারি নে। এত ভালোবাসা তাঁরা দিয়েছিলেন- এত প্রচুর পরিমাণে। এক হিসাবে আমাকে মাটি করেছেন; পড়াশুনা করতুম না, দেখ-না, চিরকাল কেমন তাই মুখ্য হয়েই রইলুম। মনে পড়ে নতুন বোঠান দুপুরবেলা বালিশে চুল এলিয়ে দিয়ে ‘বঙ্গাধীপ পরাজয়’ পড়তেন— মাঝে মাঝে আমিও পাশে বসে পড়ে শোনাতুম তাঁকে । কোথায় গেল সে- সব দিন।’
৩০ জুন ১৯৪১