Shanibarer Blog 16 August 2025 No ratings yet.

আমাদের কথা

নমস্কার। শনিবারের ব্লগের সপ্তম পর্বের আজ  অষ্টম পোষ্ট। শনিবারর ক্যুইজের জনপ্রিয়তা আর অংশগ্রহণকারী সংখ্যা প্রতি সপ্তাহেই বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটা আমাদের কাছে খুবই সুখের কথা। পাঠকের এই উৎসাহই আমাদের পরিশ্রমের পুরস্কার।

শনিবারের ক্যুইজের সঠিক  উত্তরদাতারা প্রত্যেকে  ৫টি করে পয়েন্ট সংগ্রহ করেছেন। এবারেও থাকছে একটি সহজ প্রশ্ন। আশা করি এবারও আপনাদের কাছ থেকে ঠিক উত্তরই পাব। আপনার উত্তর পাঠান

সরাসরি আমাদের WhatsApp নম্বরে
 9830606220) অথবা
ইমেল করেও আপনার উত্তর পাঠানো যাতে পারে।

আমাদের Email
pbsarkar@gmail.com

যারা প্রথম সর্বাধিক ৮০ পয়েন্ট অর্জন করবেন তাদের সল্টলেকের চিরন্তনী সভাঘরে চা-এর আসরে আপ্যায়িত করা হবে। সঙ্গে থাকবে বিশেষ প্রীতি উপহার।

ব্লগটি ভালো লাগলে আপনার পরিচিত জনেদের শেয়ার করবার অনুরোধ রইল। আর প্রতি শনিবার সকালে শনিবারের ব্লগ-এ  চোখ রাখলে ভীষণ খুশি হব।

নমস্কার
ডা. পূর্ণেন্দুবিকাশ সরকার

২ আগস্ট ২০২৫, সল্ট লেক

রবিঠাকুরের ব্যাংকার (২য় পর্ব)

তবে এই বন্ধুত্বের পথচলা শুরু হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের সদ্য-প্রকাশিত ভগ্নহৃদয় কাব্য-সমালোচনার হাত ধরেই। বস্তুত সেই সূত্রেই ১৮৮০ সালে প্রথমবার বিলাত থেকে ফেরবার পর দুজনের জানাশোনা আর একে অপরকে চেনা। বিহারীলাল চক্রবর্তী ছিলেন প্রিয়নাথের প্রতিবেশী। আবার বিহারীলালের জন্য ঠাকুরবাড়ির দরজা ছিল সদা-উন্মুক্ত। মনে করা হয় প্রিয়নাথের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের বন্ধুত্বের সেতুটি বেঁধে দিয়েছিলেন বিহারীলালবাবুই।

১২৮৮ বঙ্গাব্দের বৈশাখে ভগ্নহৃদয় বই আকারে প্রকাশিত হয়। চৌত্রিশটি সর্গের ভগ্নহৃদয়ের প্রথম ছয়টি সর্গ ১২৮৭ বঙ্গাব্দের ভারতী পত্রিকার কার্তিক থেকে ফাল্গুন মাসে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু বাকি আঠাশটি সর্গ কোথাও প্রকাশিত হয়নি। রবীন্দ্রনাথ বইটি ‘শ্রীমতী হে’কে উৎসর্গ করেছিলেন। ‘হে’র পরিচয় নিয়ে প্রথমে কিছু সংশয় থাকলেও বর্তমানে নিশ্চিতভাবে প্রমানিত হয়েছে যে বইটি কবির নতুন বৌঠান কাদম্বরী দেবীকেই উপহার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ নিজের প্রথম যৌবনের গাথাটির প্রুফ দেখে বীতশ্রদ্ধ হয়ে Rubbish মন্তব্য করে মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে লিখেছেন, ‘দোহাই ধর্মের এটা ছাপিওনা!!’  অথচ পাঠকের কাছে বইটি সমাদৃত হয়েছিল। যুবক মহলে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়েছিল। বলা হত তিনিই বাংলাদেশের ‘শেলী’। সবাই রবীন্দ্রনাথকে নকল করে ‘তাঁহার বেশ, তাঁহার কেশ, তাঁহার চসমা সবই’ অনুকরণ করতে শুরু করলেন। তিনিই তখন ফ্যাশন আইকন। ত্রিপুরার মহারাজা বীরচন্দ্রমাণিক্যের যখন জীবনের এক জটিল পরিস্থিতিতে দিশাহারা হয়ে পড়েছিলেন তখন ভগ্নহৃদয় গাথাটি সেই সংকট মোচনে অন্যতম ভূমিকা নিয়েছিল। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ভগ্নহৃদয় সম্পর্কে এতই হতাশ ছিলেন যে পরবর্তীকালে সেটি আর কখনই ছাপা হয়নি। কবির বন্ধু নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত লিখেছেন : ‘It was in deference to his unfavourable opinion that Rabindranath Tagore withdrew one of his early works from circulation and it has never been reprinted। এই Early worksটি হল আলোচ্য  ভগ্নহৃদয়  কাব্যগ্রন্থ।

 

ভাব ও ভাষার অস্পষ্টতার জন্য ভগ্নহৃদয়  কাব্যটি প্রিয়নাথ সেনের ভালো লাগেনি। তাঁর মনে হয়েছিল ‘কবি যেন সততই দুঃখে ম্রিয়মান, অন্তর তাঁহার বেদনায় জর্জর।’ জীবনস্মৃতিতে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ভগ্নহৃদয় পড়িয়া তিনি আমার আশা ত্যাগ করিয়াছিলেন। কিন্তু ১২৮৮ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত সন্ধ্যাসংগীত পাঠ করে রবীন্দ্রনাথের কাব্যপ্রতিভা সম্পর্কে প্রিয়নাথের সমস্ত দ্বিধার অবসান ঘটেছিল। তিনি উৎসাহ আর গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকে অভিনন্দিত করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথও তাঁর কৃতজ্ঞতা জানাতে কুণ্ঠিত হননি। লিখেছেন, ‘এই সন্ধ্যাসংগীত রচনার দ্বারাই আমি এমন একজন বন্ধু পাইয়াছিলাম যাঁহার উৎসাহ অনুকূল আলোকের মতো আমার কাব্যরচনার বিকাশচেষ্টায় প্রাণসঞ্চার করিয়া দিয়াছিল । তিনি শ্রীযুক্ত প্রিয়নাথ সেন । তৎপূর্বে ভগ্নহৃদয় পড়িয়া তিনি আমার আশা ত্যাগ করিয়াছিলেন, সন্ধ্যাসংগীতে তাঁহার মন, জিতিয়া লইলাম।’

 

এছাড়াও প্রভাতসঙ্গীতে সংকলিত ফরাসি থেকে অনুবাদিত কবিতা ‘তারা ও আঁখি’, ‘সূর্য ও ফুল’ সম্বন্ধে প্রিয়নাথ লিখেছেন, ‘বঙ্গের সর্বশ্রেষ্ঠ গীতিকবি আশ্চর্য প্রতিভাবলে। অসাধারণ নৈপুণ্যের সহিত ফ্রান্সের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ গীতিকবির কয়েকটি কবিতার চমৎকার অনুবাদ করিয়াছেন। তাহাতে ছন্দের সুষমা, ভাবের মাধুর্য এবং পদের মহত্ব, সকলই রক্ষিত হইয়াছে। কোনটি অনুবাদ, কোনটি মূল, তুমি বলিতে পারিবে না। যেন দুইখানি সমুজ্জ্বল মুকুরে একই সুন্দর মূর্তি প্রতিফলিত হইয়াছে।’

ফরাসি ভাষার শিক্ষা ও চর্চা জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের এক দীর্ঘ ঐতিহ্য । সত্যেন্দ্রনাথ, হেমেন্দ্রমাথ, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ এমনকি জ্ঞানদানন্দিনী দেবীও ফরাসি ভাষা শিখেছিলেন। সকলেই ফার্সি পড়তে পারতেন, এমনকি কাজ চালানোর মত কথাবার্তা বলতেও পারতেন। প্রিয়নাথ সেনের সঙ্গে বন্ধুত্বের সুবাদে রবীন্দ্রনাথও সম্ভবত এই ভাষার প্রতি উৎসাহিত হয়েছিলেন। আর তারই ফলশ্রুতিতে প্রভাতসংগীতের অনুবাদিত কবিতাগুলির জন্ম হয়েছিল। কবির অনুবাদগুলি ‘ ফরাসি কাব্য-রসিক’ প্রিয়নাথ সেনের প্রশংসা লাভ করেছিল’।

Please rate this

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *