


আমাদের কথা
নমস্কার। শনিবারের ব্লগের সপ্তম পর্বের আজ পঞ্চম পোষ্ট।
অনিবার্য কারণে গত সপ্তাহে আমরা শনিবারের ব্লগ পোষ্ট করতে পারিনি। এজন্য আমরা দুঃখিত আর ক্ষমাপ্রার্থী। চতুর্থ পোষ্টের পোষ্টের অসাধারণ সাড়ায় আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।
গতবারের ক্যুইজে অংশগ্রহণকারী প্রায় সকলেই সঠিক উত্তর দিয়েছেন, এটা আমাদের কাছে খুবই সুখের কথা।
গতবারের ক্যুইজে অনেকেই অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের ধন্যবাদ। সঠিক উত্তরদাতারা ৫টি করে পয়েন্ট সংগ্রহ
করেছেন। এবারেও থাকছে একটি সহজ প্রশ্ন। আশা করি এবারও আপনাদের কাছ থেকে ঠিক উত্তরই পাব।
সরাসরি আমাদের WhatsApp নম্বরে
9830606220) অথবা
ইমেল করেও আপনার উত্তর পাঠানো যাতে পারে।
আমাদের Email
pbsarkar@gmail.com
যারা প্রথম সর্বাধিক ৮০ পয়েন্ট অর্জন করবেন তাদের সল্টলেকের চিরন্তনী সভাঘরে চা-নের আসরে আপ্যায়িত করা হবে।
সঙ্গে থাকবে বিশেষ প্রীতি
উপহার।
ব্লগটি ভালো লাগলে আপনার পরিচিতজনেদের শেয়ার করবার অনুরোধ রইল। আর প্রতি শনিবার সকালে শনিবারের ব্লগ এ
রাখলে ভীষণ খুশি হব।
নমস্কার
ডা. পূর্ণেন্দুবিকাশ সরকার
জব চার্নক ও কলকাতার পত্তন: একটি ঐতিহাসিক পুনর্মূল্যায়ন
কলকাতা শহরের জন্ম ও বিকাশ নিয়ে ইতিহাসচর্চায় বহু বিতর্ক ও মতবিরোধ রয়েছে। একসময় যাঁকে নিরঙ্কুশভাবে কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মানা হতো, সেই ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্তা জব চার্নক-এর ভূমিকা আজ ঐতিহাসিকদের আলোচনার কেন্দ্রে। কিন্তু তর্কের ঊর্ধ্বে থেকেও বলা যায়—চার্নকের পদক্ষেপ ছিল এই শহরের নগরায়নের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। জব চার্নক ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি, যিনি আনুমানিক ১৬৩০ সালে ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৬৫৫ সাল নাগাদ ভারতে এসে দীর্ঘদিন কাশিমবাজার, পাটনা ও হুগলিতে অঞ্চলে ছিলেন কাজের সুবাদে বাংলার স্থানীয় সমাজ ও সংস্কৃতির সঙ্গে একধরনের আন্তরিক সংযোগ গড়ে তুলেছিলেন। শোনা যায় তিনি এক হিন্দু বিধবাকে সতীদাহ থেকে রক্ষা করে বিবাহ করেছিলেন, যা সেই সময়ের প্রেক্ষিতে এক সাহসী ও ব্যতিক্রমী ঘটনা।
১৬৮৬ সালে হুগলিতে মুঘলদের সঙ্গে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সংঘর্ষের পর চার্নক নতুন কেন্দ্র খুঁজতে কলকাতার গঙ্গার পাড়ে ‘সুতানুটি’ গ্রামে এসে উপস্থিত হন। ১৬৯০ সালের ২৪ আগস্ট চার্নক সুতানুটিতে একটি বাণিজ্যকেন্দ্র স্থাপন করেন এবং এখান থেকেই শুরু হয় নতুন এক অধ্যায়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষে তিনি এখানে স্থায়ী বসতি গড়ে তোলেন। তাঁর নানবিধ উন্নয়নমূলক কাজের ফলস্বরূপ কলকাতা ধীরে ধীরে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র আর পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী হয়ে ওঠে।
চার্নক ও তাঁর সহযোগীরা কলকাতার যে এলাকায় বসতি স্থাপন করেছিলেন, তা ছিল তিনটি গ্রাম—সুতানুটি, গোবিন্দপুর এবং কলিকাতা। এই জমি ১৬৯৮ সালে সাবর্ণ রায়চৌধুরীর জমিদারি থেকে কোম্পানির মালিকানায় আসে। তবে ইতিহাসবিদদের মতে, এই এলাকাগুলি ইতিমধ্যেই বসতিপূর্ণ ছিল। বাঙালি কৃষক, ব্যবসায়ী ও হস্তশিল্পীদের বসবাস এখানে বহুদিনের।
২০০৩ সালে কলকাতা হাইকোর্ট এক ঐতিহাসিক রায়ে জানায় যে, জব চার্নক কলকাতার “প্রতিষ্ঠাতা” নন। আদালত বলেন, কলকাতার উৎপত্তি এক দিনের ঘটনা নয়, বরং এটি একটি দীর্ঘ সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ার ফসল, যেখানে বাংলার স্থানীয় জনগণের অবদান অসামান্য। ফলে চার্নকের ভূমিকা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হিসেবেই বিবেচ্য, শহর প্রতিষ্ঠার একক গৌরবের দাবিদার নয়।
তবু ইতিহাসে তাঁর নাম জড়িয়ে গেছে কলকাতার সঙ্গে। ১৬৯২ সালে মৃত্যুর পর তাঁর সমাধি সেন্ট জনস চার্চে স্থাপিত হয়, যেটি আজও ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে বিদ্যমান। তাঁর স্মৃতিতে নির্মিত সমাধিস্তম্ভটি কালো ‘চার্নকাইট’ পাথরে তৈরি, যেটি ভারতের অন্যতম প্রাচীন সমাধি-স্মারকগুলির অন্যতম।
সার্বিকভাবে বিচার করলে, জব চার্নক ছিলেন কলকাতার আধুনিক রূপান্তরের সূচনালগ্নের এক প্রতীক। তিনি হয়তো শহর গড়ে তোলেননি, কিন্তু তাঁর আগমনে যে পরিবর্তনের ঢেউ উঠেছিল, তা নিঃসন্দেহে কলকাতার ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। কলকাতা শহর তাই চার্নকের পদচিহ্নকে স্মরণ করে, কিন্তু স্বীকার করে বৃহত্তর সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টাকেই।








