

আমাদের কথা
নমস্কার। শনিবারের ব্লগের সপ্তম পর্বের আজ নবম পোষ্ট। গত সপ্তাহের ক্যুইজ প্রশ্নে কিছু ত্রুটি থাকার জন্য অনেকের কাছে সেটি দুর্বোধ্য মনে হয়েছে। এজন্য আমরা আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। এবার সকল উত্তরদাতাকেই সম্পূর্ণ পয়েন্ট দেওয়া হয়েছে। যারা প্রথম সর্বাধিক ৮০ পয়েন্ট অর্জন করবেন তাদের সল্টলেকের চিরন্তনী সভাঘরে চা-এর আসরে আপ্যায়িত করা হবে। সঙ্গে থাকবে বিশেষ প্রীতি উপহার।
সুখের কথা যে, শনিবারর কাইজের জনপ্রিয়তা আর অংশগ্রহণকারী সংখ্যা প্রতি সপ্তাহেই বৃদ্ধি পাচ্ছে পাঠকের এই উৎসাহই আমাদের পরিশ্রমের পুরস্কার। ব্লগটিকে আরও আকর্ষণীয় আর উপভোগ্য করবার জন্য আমরা নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ বিষয়ে আপনাদের মতামত আর পরামর্শ আমাদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান।
গীতবিতান আর্কাইভ এখন পেনড্রাইভে সংকলিত হয়েছে। যারা সংগ্রহ করতে ইচ্ছুক আমাদের WhatsApp বা Email এ যোগাযোগ করতে পারেন।
আমাদের WhatsApp নম্ব 9830606220)
আমাদের Email pbsarkar@gmail.com
ব্লগটি ভালো লাগলে আপনার পরিচিত জনেদের শেয়ার করবার অনুরোধ রইল। আর প্রতি শনিবার সকালে শনিবারের ব্লগ-এ চোখ রাখলে ভীষণ খুশি হব।
নমস্কার
ডা. পূর্ণেন্দুবিকাশ সরকার
২৩ আগস্ট ২০২৫, সল্ট লেক

কবিকথা
মালিনী রবীন্দ্রনাথের একটি স্বপ্নলব্ধ নাটক। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘মালিনী নাটিকার উৎপত্তির একটা বিশেষ ইতিহাস আছে,
সে স্বপ্নঘটিত। তখন ছিলুম লণ্ডনে। নিমন্ত্রণ ছিল প্রিমরোজ হিলে তারক পালিতের বাসায় প্রবাসী বাঙালিদের প্রায়ই সেখানে হত জটলা, আর তার সঙ্গে চলত ভোজ ! গোলেমালে রাত হয়ে গেল । যাঁদের বাড়িতে ছিলুম অত রাত্রে দরজার ঘণ্টা বাজিয়ে দিয়ে হঠাৎ চমক লাগিয়ে দিলে গৃহস্থ সেটাকে দুঃসহ বলেই
গণ্য করতেন তাই পালিত সাহেবের অনুরোধে তাঁর ওখানেই রাত্রিযাপন স্বীকার করে নিলুম । বিছানায় যখন
শুন তখনো চলছে কলরবের অন্তিম পর্ব, আমার ঘুম ছিল আবিল হয়ে ।/ এমন সময় স্বপ্ন দেখলুম, যেন আমার ..
মনে একটা নাটকের অভিনয় হচ্ছে । বিষয়টা একটা বিদ্রোহের চক্রান্ত। দুই বন্ধুর মধ্যে এক বন্ধু
কর্তব্যরোধে সেটা ফাঁস করে দিয়েছেন রাজার কাছে । বিদ্রোহী বন্দী হয়ে এলেন রাজার সামনে । মৃত্যুর পূর তার যে ইচ্ছা পূর্ণ করবার জন্যে তাঁর বন্ধুকে যেই তাঁর কাছে এনে দেওয়া হল দুই হাতের শিকল তাঁর
মাথায় মেরে বন্ধুকে দিলেন ভূমিসাৎ করে । জেগে উঠে যেটা আমাকে আশ্চর্য ঠেকল সেটা হচ্ছে এই যে আমার মনের একভাগ নিশ্চেষ্ট শ্রোতামাত্র, অন্যভাগ বুনে চলেছে একখানা নাটক । স্পষ্ট হোক অস্পষ্ট হোক
একটা কথাবার্তার ধারা গল্পকে বহন করে চলেছিল। জেগে উঠে সে আমি মনে আনতে পারলুম না । পালিত
সাহেবকে মনের ক্রিয়ার এই বিস্ময়করতা জানিয়েছিলুম। তিনি এটাতে বিশেষ কোনো ঔৎসুক্য বোধ করলেন না। কিন্তু অনেক কাল এই স্বপ্ন আমার জাগ্রত মনের মধ্যে সঞ্চরণ করেছে। অবশেষে অনেক
দিন পরে এই স্বপ্নের স্মৃতি নাটিকার আকার নিয়ে শান্ত হল।’

পূর্ব প্রকাশের পর (তৃতীয় কিস্তি)
বেনীমাধব রায়চৌধুরী, জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সেরেস্তার একজন বিশ্বস্ত কর্মচারি, মাইনে বারো টাকা। বাড়ি যশোর জেলার ফুলতলি গ্রামে। তাঁর জ্যেষ্ঠা কন্যা ভবতারিনী। বয়স সবে নয় বছর পেরিয়েছে। রোগা, গ্রাম্য কিশোরীটির পড়াশুনো সীমা ‘বোধদয়’ পর্যন্ত। বাইশ বছরের তরুণ রবীন্দ্রনাথ সেইসময়ে কারোয়ার সমুদ্রের সৌন্দর্যে বিভোর। তাঁর কলমে একটু একটু করে উন্মোচিত হচ্ছে প্রকৃতির অভিশাপ নাটক। নতুন সৃষ্টির সেই ঊষালগ্নে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের নির্দেশে তাঁকে তড়িঘড়ি কলকাতায় ডেকে পাঠিয়ে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল বিয়ের পিঁড়িতে। ১৮৮৩ সালের ৯ ডিসেম্বরে জোড়াসাঁকোর দালানে এক অত্যন্ত অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ মালা পরিয়ে দিয়েছিলেন সেই নিরক্ষর গ্রাম্য মেয়েটির গলায়। বিয়ের পরে রবীন্দ্রনাথ স্ত্রীর পুরোনো নামটি বদলিয়ে মৃণালিনী করে দিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ পরে বলেছিলেন, ‘আমার বিয়ের কোনো গল্প নেই। বৌঠানরা যখন বড় বেশী পীড়াপীড়ি শুরু করলেন, আমি বললুম, তোমরা যা হয় করো, আমার কোনো মতামত নেই।’ তবে একথা নিশ্চিত যে তাঁদের দাম্পত্য-জীবন সুখের হয়েছিল। যদিও তা মৃণালিনীর অকালমৃত্যুর কারণে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারেনি।
নিজের হাতে লেখায়, রবীন্দ্রনাথ তাঁর বিয়ের একটি অসাধারণ নিমন্ত্রণ-পত্র রচনা করে প্রিয়নাথ সেনকে পাঠিয়ে ছিলেন। সেই বিখ্যাত নিমন্ত্রণ-পত্রটি কবির রসবোধ, মৌলিকত্ব আর অভিনবত্বে আজও আমাদের বিস্মিত করে রেখেছে। ‘প্রিয়বাবু – আগামী রবিবার ২৪শে অগ্রহায়ণ তারিখে শুভদিনে শুভলগ্নে আমার পরমাত্মীয় শ্ৰীমান্ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শুভবিবাহ হইবেক। আপনি তদুপলক্ষে বৈকালে উক্ত দিবসে ৬নং যোড়াসাঁকোস্থ দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভবনে উপস্থিত থাকিয়া বিবাহাদি সন্দর্শন করিয়া আমাকে এবং আত্মীয়বর্গকে বাধিত করিবেন । ইতি । অনুগত । শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।’ চিঠির উপরের কোনায় এম্বস্ করে লেখা ছিল ‘আশার ছলনে ভুলি কি ফল লভিনু হায়’। আবার তার পাশে ‘আমার motto নহে।’ মন্তব্যটিও লেখা ছিল। নিমন্ত্রণ-পত্রটি প্রিয়নাথ সেন ছাড়াও অন্যান্যদের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল। একথা মনে রাখতে হবে যে প্রতিটি চিঠিই কবি নিজের হাতে লিখেছেন। তবে চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করে প্রিয়নাথ রবীন্দ্রনাথকে কিছু লিখেছিলেন কিনা জানা যায়নি।
বিয়ের কিছুদিন পরে প্রিয়বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা আর গল্পের লোভে প্রিয়নাথকে লিখেছেন, প্রিয় বাবু, কাল আমাদের এখানে অর্থাৎ ( ১৪নং সর্কলের রোডে ) একটা ছোট পার্টি আছে, তাতে ঋষি ও হালদার আসবেন, আপনি এলে বড়ই খুসি হই। মেজদাদার সেই অবসরে আপনার সঙ্গে আলাপ করবার ইচ্ছে আছে। আসবেন। কাল দিনের মধ্যে যখন খুসী আসবেন— সন্ধ্যের সময় খেয়ে গান শুনে বাড়ি যাবেন। প্রিয়নাথ প্রিয়বন্ধুর ডাকে সাড়া না দিয়ে পারেন নি। কিছুদিন পরে, রবীন্দ্রনাথের তরফ থেকে আবার আহ্বান এসে পৌঁছাল প্রিয়নাথের দুয়ারে। সঙ্গে কিছুটা রহস্য। Honeymoon কি কোনোকালে একেবারে শেষ হবার কোনো সম্ভাবনা আছে— তবে কি না moon-এর হ্রাস বৃদ্ধি পূর্ণিমা অমাবস্যা আছে বটে। অতএব আপনি Honeymoon – এর কোনো খাতির না রেখে হঠাৎ এসে উপস্থিত হবেন। আমি তো বহুকাল বিহারীবাবুর এখেনে যাইনি— মাঝে মাঝে যাব যাব মনে করি কিন্তু কিছুতেই জড়তা ত্যাগ করে যেতে পারিনে। সোম মঙ্গলবারে আমি বাড়িতে থাকব এবং প্রায় থাকি । আপনি যদি আসেন ত আরও থাকব ।
ক্রমশঃ

পদ্মাবোটের রবি : গীতি-আলেখ্য মঞ্চায়ন
18th অগাস্ট সন্ধ্যায় সল্টলেক রবীন্দ্র ওকাকুরা ভবনে মঞ্চস্থ হল সল্টলেক চিরন্তনী আয়োজিত গীতি আলেখ্য “পদ্মাবোটের রবি”। গীতি আলেখ্যটি রচনা করেছেন ডা. পূর্ণেন্দুবিকাশ সরকার (রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ এবং আনন্দ পুরস্কার প্রাপ্ত)। আবৃত্তিতে এবং পাঠে ছিলেন বর্ণালী সরকার, তন্ময় চক্রবর্তী এবং কল্লোল চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গীতে ছিলেন দেবমাল্য চট্টোপাধ্যায়, শুভাশিস মিত্র, ম্যাডোনা চট্টোপাধ্যায় এবং অজন্তা চক্রবর্তী। বর্ণালী সরকারের আবৃত্তি দর্শকদের মুগ্ধ করেছে বিশেষ করে পুরাতন ভৃত্য এবং সুব্রত (বাবু) মুখার্জীর সঙ্গে দ্বৈত নিবেদনে কৃষ্ণকলি কবিতাটি। এছাড়াও দুই পাখি, আষাঢ়, বিম্ববতী আবৃত্তিগুলিও প্রশংশিত হয়েছে। শুরুতেই ম্যাডোনা চট্টোপাধ্যায়ের কন্ঠে “আজ যেমন করে গাইছে আকাশ” গানটি আলেখ্যটির পরিবেশটি তৈরি করে দেয়। প্রথিতযশা শিল্পী দেবমাল্য চট্টোপাধ্যায় তার নিজস্বতা বজায় রেখেছেন। শুভাশিস মিত্রের কন্ঠে “আজি হৃদয় আমার যায় যে ভেসে’ এবং অন্যান্য গানগুলি অসাধারণ লাগলো। অজন্তা চক্রবর্তী ‘আহা জাগি পোহালো বিভাবরী’ এবং অন্যান্য গানগুলিও চমৎকার গাইলেন। পাঠে তন্ময় চক্রবর্তী এবং কল্লোল চট্টোপাধ্যায় অনবদ্য ছিলেন। কীবোর্ডে সুব্রত (বাবু )মুখার্জী পুরো আলেখ্যটির পরিবেশ তৈরি করে দেন। তালবাদ্যে ছিলেন দিব্যেন্দু ব্যানার্জী এবং পারকাশনে ছিলেন অমিত রঞ্জন রায়। অনুষ্ঠানের শুরুতে একক আবৃত্তিতে ছিলেন ড.অমিত চট্টোপাধ্যায়, রূপা নন্দী এবং নবনীতা ভট্টাচার্য্য। একক সঙ্গীতে ছিলেন সোমা চক্রবর্তী এবং সোনালী চক্রবর্তী। সম্মেলক সঙ্গীতে কলাপী নিউটাউন।

জলের বোতল পরিচ্ছন্ন রাখুন
জলের বোতল আজকাল আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে। বাড়িতে হোক বা বাইরে চলের পথে, স্কুলে অফিস-কাছারিতে সবার হাতে একটা জলের বোতল থাকবেই। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে, সেটি যেন যথাযতভাবে পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন থাকে। বোতল খালি হোক বা না হোক, অনেকে সেই বোতলেই আবার নতুন করে জল ভরে নেন। কেউ আবার বোতলে যেটুকু জল পড়ে থাকে সেটা ফেলে না-দিয়েই নতুন করে জল ভরে নেন। ধোয়াধুয়ির বালাই নেই। যেটুকু ধোয়া হয়, তা নামমাত্র। এমন ব্যবস্থায় আপনিও কি অভ্যস্থ ? কতটা ক্ষতিকর এমন অভ্যাস?
জলের বোতল থেকে নানা ধরণের রোগ-জীবাণুর সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকেই যায়। অনেকসময় জলের বোতল হয়ে ওঠে অসুখের আঁতুড়ঘর। জলে বাসাবাঁধা ব্যাক্টিরিয়ারা আমাদের শরীরে প্রবেশ করে নানা অসুখের বীজ বপন করে।
অনেকেই বোতলে মুখ দিয়ে জল খান। সেই সময় মুখের ভিতরকার রোগের জীবাণুগুলো বোতলের জলে ছড়িয়ে পড়ে। মুখে থাকা খাদ্যকণা লালার মাধ্যমে জলের সঙ্গে মিশে যায়। আর তাই থেকেই শরীরে রোগ-জীবাণু বেড়ে ওঠে। বোতলের পুরনো জলের মধ্যে নতুন জল ঢালাও ঠিক নয়। এছাড়া একজনের জলের বোতল অন্যকে দেওয়া উচিত নয়। বিশেষত অসুস্থ মানুষের বোতলে জল খাওয়া একেবারেই অনুচিত।
জলের বোতল কি রোজই ধোয়া দরকার নাকি মাঝে মাঝে পরিষ্কার করলেই চলবে। হ্যাঁ, জলের বোতল প্রতিদিন পরিষ্কার করা দরকার। এবং এজন্য হালকা, ক্ষারবিহীন লিক্যুইড সাবানই সবচেয়ে ভালো কাজ করে। প্রথমেই বোতলে যে টুকু জল আছে তা ফেলে দিতে হবে। তারপর লিক্যুইড সাবান ভরে বারবার ঝাকিয়ে ট্যাপের জলে পরিষ্কার করে নিতে হয়। অনেক সময় বোতলের জলে গন্ধ হয়। পাতিলেবুর রস বা জলে সাদা ভিনিগার মিশিয়ে তা দিয়েও বোতল ধোয়া যেতে পারে। পাতিলেবু এবং ভিনিগারের অ্যাসিড জাতীয় উপাদান দুর্গন্ধ এবং রোগ-জীবাণু দূর করতে সাহায্য করে। গরম জলে পরিষ্কার করলেও হবে। বোতল সাবান দিয়ে ধোয়ার পরে রোদে বা হাওয়ায় বোতল শুকিয়ে নিলেও, সংক্রমের সম্ভাবনা হ্রাস পাবে। দুর্গন্ধও হবে না।

