

আমাদের কথা
নমস্কার। শনিবারের ব্লগের সপ্তম পর্বের আজ তৃতীয় পোষ্ট। গতবারের পোষ্টের অসাধারণ সাড়া পেয়ে আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। গতবারের ক্যুইজে অংশগ্রহণকারী প্রায় সকলেই সঠিক উত্তর দিয়েছেন, এটা আমাদের কাছে খুবই সুখের কথা।
গতবারের ক্যুইজে অনেকেই অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের ধন্যবাদ। সঠিক উত্তরদাতারা ৫টি করে পয়েন্ট সংগ্রহ
করেছেন। এবারেও থাকছে একটি সহজ প্রশ্ন। আশা করি এবারও আপনাদের কাছ
থেকে ঠিক উত্তরই পাব।
সরাসরি আমাদের WhatsApp নম্বরে
(8240498040 / 9830606220) অথবা
ইমেল করেও আপনার উত্তর পাঠানো যাতে পারে।
আমাদের Email
pbsarkar@gmail.com
যারা প্রথম সর্বাধিক ৮০ পয়েন্ট অর্জন করবেন তাদের সল্টলেকের চিরন্তনী সভাঘরে চা-নের আসরে আপ্যায়িত করা হবে। সঙ্গে থাকবে বিশেষ প্রীতি
উপহার।
ব্লগটি ভালো লাগলে আপনার পরিচিতজনেদের শেয়ার করবার অনুরোধ রইল। আর প্রতি শনিবার সকালে ‘শনিবারের ব্লগ এ রাখলে ভীষণ খুশি হব।
নমস্কার
ডা. পূর্ণেন্দুবিকাশ সরকার

ষড়যন্ত্রের শিকার
চার ছেলে (কামদেব, জয়দেব, রতিদেব, শুকদেব) আর এক মেয়ে রত্নমালাকে নিয়ে দক্ষিণানাথের সুখের সংসার। কামদেব আর জয়দেব তাদের পাণ্ডিত্যের জন্য পীর আলির সভার অমাত্যদের মধ্যে বিশেষ স্থান করে নিয়েছেন। অন্য দুই ভাই রতিদেব ও শুকদেব দক্ষিণডিহিতে পৈত্রিক জমিদারি সামলাচ্ছেন সমান দক্ষতায়। কিন্তু আচমকা এক দুর্ঘটনায় সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। উচ্চবর্গীয় ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় থেকে তারা ছিটকে পড়লেন অনেক নীচে, সমাজে তাদের আর কুলীন ব্রাহ্মণের মর্যাদা হইল না।
রমজান ইসলাম ধর্মমতে সবচেয়ে পবিত্র মাস। সেই মাসে ইসলাম ধর্মাবলম্বী মুসলমানেরা অনেকেই একমাস ধরে রোজা পালন করেন। অর্থাৎ ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তারা কোনো খাবার এমনকি একবিন্দু জলও মুখে না-ছুঁইয়েই সারাটা দিন কাটিয়ে দেন। খিদে আর তেষ্টায় যতই কষ্ট হোক, ধর্মের শাসন তাদের অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে হয়। সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের পরে, পবিত্র নমাজ পাঠ করে, ফলমূল ইত্যাদি খেয়ে উপবাস ভঙ্গ করেন। সেটাই নিয়ম। সেবার রমজান মাসে পীর আলি নমাজ পড়বার আগেই, সামনে রাখা ফলের ঝুঁড়ি থেকে একটা লেবু নিয়ে তার গন্ধ শুঁকছিলেন। তাই দেখে কামদেব আলিসাহেবকে সাবধান করে বলেছিলেন, ‘মহারাজ, আপনি নমাজ পড়বার আগেই লেবুটার গন্ধ শুঁকলেন, এটা কিন্তু ঠিক হল না। প্রবাদ আছে ‘ঘ্রাণেন অর্ধ ভোজনাং’। অর্থাৎ আপনার আদ্দেক লেবু খাওয়া হয়ে গেল। তাই আপনার এবারের রোজার কোনো মূল্য রইল না।’ নিজের পান্ডিত্ব জাহির করে কামদেব বোধহয় একটু মুচকি হেঁসেছিলেন। জয়দেবও টিকি নেড়ে প্রাচীন প্রবাদটিকে সমর্থন জানাতে ভোলেননি। সভায় যেন বিনামেঘে বজ্রপাত হল। সভাসদদের কারও মুখে কথা নেই। পীর আলি কিন্তু কোনো মন্তব্য করলেন না। অপমানটা মুখ বুজে হজম করে প্রতিশোধ নেবার সুযোগের জন্য অপেক্ষা করে রইলেন কেবল। সুযোগটাও এসে গিয়েছিল তাড়াতাড়িই। সুযোগ না ষড়যন্ত্র? কামদেবদের সেই হেনেস্থা আর অপমানের প্রতিশোধ পীর আলি যেভাবে নিয়েছিলেন, সেটা ষড়যন্ত্রেরই নামান্তর।
সেবার শীত বিদায় নিয়ে বসন্ত শুরু হয়েছে। পাখিদের কলকাকলী আর সবুজের সমারোহে প্রকৃতি অপরূপ সাজে সেজে উঠেছে। গাছে গাছে নতুন কচি পাতা, ধানের খেতে দিগন্তখোলা সবুজের ঢেউ। দখিন হাওয়ায় মানুষের মন আনন্দে ভরপুর। প্রজাদের খাজনা আর উপহারে রাজকোষ উপচে পড়েছে। পীর আলির সুখ-সমৃদ্ধি প্রায় আকাশ ছুঁই ছুঁই। এই সুখের সময়ে একদিন পীর আলি তার সভাসদ আর পাত্রমিত্রদের আমন্ত্রণ জানালেন এক সান্ধ্যভোজের আসরে। উপলক্ষ নিছক আড্ডা, গানবাজনা, নাচ আর রসনা-তৃপ্তি। নির্দিষ্ট দিনে একে একে জমায়েত হয়েছেন রাজ সভঘরে। সভাঘরটি সাজানো হয়েছে মোগল-দরবারের আদলে। মেঝেতে সুদৃশ্য পারস্যের কার্পেট, বসবার বিরাট বিরাট সোফা, দেওয়ালে রাজপুরুষদের তৈলচিত্র। আরতের সুগন্ধ, আলোর সজ্জা আর ফুলের বাহারে রাজকীয় ঐশ্বর্য যেন বেহেশতেরকেও হার মানাচ্ছে। লখনৌ থেকে এসেছে বিখ্যাত নর্তকীরা। একটু পরেই শুরু হবে তাদের নাচ-গান। পাগড়ি পরা বেয়ারার বিদেশী সুরা পাত্রভরে এগিয়ে দিচ্ছেন অতিথিদের হতে হাতে। রসুইখানায় চলছে নানারকম সুখাদ্যের আয়োজন। গানবাজনা আর রসালাপে সভা সবে জমে উঠেছে, এমন সময় দখিণা বাতাসে ভর করে জানলা দিয়ে ভেসে এল বিরিয়ানির অসাধারণ খুশবু। ভৃত্যদের আগে থেকেই শেখানো ছিল। মনিবের ইঙ্গিতে তারা ধূমায়িত গোমাংস-বিরিয়ানীর বিশাল হাঁড়িটি সরাসরি সভাঘরের মাঝখানে নিয়ে এল। আচমকা এই ঘটনায় মাংসের গন্ধ যেতেই কামদের-জয়দেব হতচকিত হয়ে নাকমুখ ঢেকে সভা থেকে পালাতে চাইলেই পীর আলি ক্রুর কণ্ঠে বলে উঠলেন, ‘ওহে ব্রাহ্মণসন্তান, সেদিন আমাকে বলেছিলে ‘ঘ্রাণেন অর্ধ ভোজনাং’। তাহলে আজ থেকে জাত খুইয়ে তোমার মুসলমান হয়ে গেলে’। শুধু তাইই নয়, জোর করে তাদের খেতে বাধ্য করা হল নিষিদ্ধ গোমাংস খেতে।
(আগামী সংখ্যায়)
কবিকথা
পুরুষের চেয়ে মেয়েরা বাঁচে বেশি। কারণ তাদের অনেক ভাইটালিটি জমা থাকে। পুরুষেরা কত সহজে অল্প অসুখেই মারা যায়, কিন্তু মেয়েরা অনেক কঠিন কঠিন অসুখও সহজে পেরিয়ে আসে। তোমাদের কত সুবিধে, ওটাও তো একটা প্রার্থনীয় বস্তু। অবশ্যি আমার পক্ষে নয়। একটা বয়সের পরে আর ওটার দাবি না করাই উচিত, কিন্তু দেখবি, সময় যত কাছে ঘনিয়ে আসবে ততই একটা বাঁচবার আকাঙ্ক্ষা প্রবল হবে। যুক্তি দিয়ে ওখানে কিছু করা যায় না, মানব-মনের ধর্মই এই। (২৫ মার্চ ১৯৩৯)



রবীন্দ্রগবেষক ডাঃ পূর্ণেন্দু সরকার রবীন্দ্রনাথের নানা অসুস্থতার বিষয়ে ডাঃ নৃপেন ভৌমিকের বইটির উল্লেখ করেছেন এবারের ব্লগে।
ভবিষ্যতে ডাঃ সরকার চিকিৎসকের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে রবীন্দ্রনাথের স্বাস্থ্যের বিষয়ে ব্লগের কোনও সংখ্যায় যেন লেখেন, তার অনুরোধ রাখছি।