শেষের ক’দিন 4.25/5 (8)

১৯৪১ । ২৫ জুলাই – ৭ আগস্ট

২৫ জুলাই ।  রেলওয়ের স্পেশাল কোচে অসুস্থ রবীন্দ্রনাথকে শান্তিনিকেতন থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা হল অপারেশনের জন্য। মহর্ষি ভবনের দোতলার পাথরের ঘরের বিছানায় তাঁর শয্যা পাতা।  শরীর ক্লান্ত । বলছেন, ‘ভালো লাগছে না।’ রানী চন্দ সারাক্ষণ পাশে বসে রয়েছেন, পায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।  পাশের ঘরে চলেছে ডাক্তারদের আনাগোনা।

২৬ জুলাই । কবি আজ অপেক্ষাকৃত ভাল, একটু উৎফুল্ল। অনেকেই একে একে দেখতে এলেন, এলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। খুড়ো-ভাইপো গল্পে জমে গেলেন। কবি অবনীন্দ্রনাথের ‘ঘরোয়া’ বইটির প্রশংসা করে বললেন, ‘সবাই আমাকে ছিন্ন-ভিন্ন করেছে। আমাকে স্তুতি করতে গিয়ে আসল আমাকে ধরতে পারে নি। তোমার মুখ দিয়ে এতদিনে সবাই জানবে তোমাদের রবিকাকাকে।’ বিকেলে ডাক্তার এসে হাতের শিরায় গ্লুকোজ ইন্‌জেকশন দিলেন।  একটু পরেই শুরু হল সারা শরীরে অসম্ভব কাঁপুনি। রাতে জ্বর এল, ১০২.৪, গুরুদেব ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন।

২৭ জুলাই । রাতে ঘুমের পরে সকালে উঠে মুখে মুখে রচনা করলেন  ‘শেষ লেখা’ কাব্যের সেই বিখ্যাত কবিতা ‘প্রথম দিনের সূর্য’

কবিতাটা রানী চন্দ খাতায় লিখে নিয়েছিলেন সাথে সাথে। রবীন্দ্রনাথ সেটি একটু  সংশোধন করে দিলেন নিজের হাতে। রানীর কাছে শুনতে চাইলেন ‘বিপদে মোরে রক্ষা করো কবিতাটি’। বললেন, ‘এইসব কবিতাগুলি মুখস্থ করে রেখে দিস – এগুলো মন্ত্রের মত।’ আজ গুরুদেব বেশ প্রসন্ন। অনেকেই দেখতে এসেছেন তাঁকে। হালকা রসিকতা করলেন সবার সঙ্গে। বললেন, ‘এ তো বড়ো বিপদ হল হে ডাক্তারদের। রোগী আছে, রোগ নেই। এতে ডাক্তাররা ক্ষুণ্ণ হবে না তো কি – বল ?’

২৯ জুলাই । কবির মন ভাল নেই। অপারেশনের চিন্তায় কিছুটা ভীত, বিমর্ষ। বললেন, ‘যখন অপারেশন করতেই হবে তখন তাড়াতাড়ি ব্যাপারটা চুকে গেলেই ভালো।’  ঠিক হয়েছে ৩০ তারিখেই অপারেশন হবে, বাড়িতে তৈরি অস্থায়ী অপারেশন থিয়েটারে। গুরুদেবকে সেকথা জানানো হয়নি, পাছে তিনি বিচলিত হয়ে পড়েন। কিন্তু তিনি আন্দাজে বুঝতে পারছেন কিছু একটা ঘটতে চলেছে। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের কাছে জানতে চাইলেন অপারেশনে ব্যাথা লাগবে কি না। জ্যোতি আশ্বাস দিলেন, ‘একটুও লাগবে না। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।’ বিকেলে নতুন একটা কবিতার কিছু লাইন আবৃত্তি করলেন। সাথে সাথে খাতায় লিখে রাখলেন রানী চন্দ।

৩০ জুলাই । আজ অপারেশন। পুব দিকের টানা বারান্দার অপারেশন থিয়েটারে প্রস্তুতি তুঙ্গে। ডাক্তারেরা এসে গিয়েছেন। সবার মনে এক অজানা আশঙ্কা। গুরুদেব একটু উদ্বিগ্ন।  জনে জনে জিজ্ঞাসা করে কোনো সদুত্তর পাচ্ছেন না। অভিমানে চুপ করে শুয়ে রইলেন। একটু পরে রানী চন্দকে ইশারা করে, অস্ফুট-উচ্চারণে ধীরে ধীরে বলে গেলেন – তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি ..

দুহাত বুকের উপর জড়ো করে চুপচাপ শুয়ে আছেন চোখ বুজে। কবির চিরসঙ্গী পুত্রবধূ প্রতিমা দেবী অসুস্থ, রয়েছেন শান্তিনিকেতনে। রানী চন্দের বকলমে চিঠি লিখলেন প্রিয় বৌমাকে, কাঁপা হাতে চিঠির নীচে সই করলেন ‘বাবামশায়’। জীবনের শেষ চিঠি, জীবনের শেষ স্বাক্ষর।

ওদিকে অপারেশনের প্রস্তুতি শেষ। কবিকে এখনো জানানো হয়নি কিছুই। ললিতবাবু ( ডাক্তার ললিতমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়) সার্টের হাতা গুটিয়ে, কনুই পর্যন্ত হাত ধুয়ে, গুরুদেবের ঘরে ঢুকে বললেন, ‘আজ দিনটা ভালো আছে। তাহলে আজই সেরে ফেলি – কি বলেন?’ রবীন্দ্রনাথ  হকচকিয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ চুপচাপ। তারপরে বললেন, ‘তা, ভালো, এরকম হঠাৎ হয়ে যাওয়াই ভালো।’ আবার কিছু নৈশব্দ। একটু আগের লেখা কবিতাটা একবার শুনে নিলেন রানী চন্দের মুখে।

বেলা এগারোটায় কবিকে স্ট্রেচারে করে নিয়ে আসা হল অপারেশনের টেবিলে। লোকাল অ্যানাস্থেসিয়া দিয়ে মিনিট কুড়ির অপারেশন। কবিকে ফিরিয়ে আনা হল তাঁর ঘরে। সকলের উদ্বিগ্ন মুখ দেখে তিনি রসিকতা করে বললেন, ‘কি ভাবছ ? খুব মজা – না ?’ আসলে অপারেশনের সময় তাঁর অসম্ভব ব্যাথা লেগেছিল। কিন্তু কাউকে একটুও টের পেতে দেন নি, একবারও মুখে কোনো শব্দ করেন নি। রানী চন্দের কাছে আগের দিনের লেখা কবিতাটা আবার শুনে তাতে যোগ করলেন- দুঃখের আঁধার রাত্রি বারে বারে এসেছে আমার দ্বারে ……

৩১ জুলাই । দুপুর থেকে নিঃসাড় হয়ে রয়েছেন। জ্বর বাড়ছে। অস্ফুটে একবার বললেন, ‘ব্যাথা করছে, জ্বালা করছে’। রাতে ভালো ঘুম হল না, কেবল  ছটফট করলেন সারারাত।

১ অগস্ট । আজ সকাল থেকে গুরুদেব কোনো কথাই বলছেন না। অসাড় হয়ে আছেন। কেবল যন্ত্রণাসূচক শব্দ করছেন থেকে থেকে। দুপুরের দিকে কিছু জিজ্ঞেস করলে শুধু মাথা নাড়ছেন। মাঝে মাঝে যখন তাকান – তাঁর মুখের কাছে মুখ নিয়ে যাই, ভাবি, কিছু বুঝি-বা বলতে চাইছেন ; কিন্তু কিছু বলেন না। অল্প অল্প জল, ফলের রস খাওয়ানো হচ্ছে গুরুদেবকে। ডাক্তাররা চিন্তিত। অন্য কোনো উপসর্গ আছে কি না ধরতে পারছেন না।  সারাদিন ডাক্তারদের আনাগোন৷ পরামর্শ ফিসফাস চলেইছে। এদিক-ওদিক যেতে-আসতে পাশের ঘরের কথা কিছু কিছু কানে আসছে। বড়ো ভাবনা হল, ভীত হয়ে পড়লাম।

২ আগস্ট । কাল রাতটা নানা রকম ভয়-ভাবনাতে কাটল । গুরুদেব কেমন যেন আচ্ছন্ন হয়ে ছিলেন সারারাত। আজ সকালে কথা দু-চারটে যা বলছেন – পরিষ্কার। কিছু খাওয়াতে গেলে বিরক্তি প্রকাশ করেন, বলেন – ‘আঃ, আমাকে আর জ্বালাসনে তোরা।’  আজ গুরুদেবের মুখে এরকম কথা শুনেও কত ভালো লাগছে। এ দুদিন যেন দম আটকে আসছিল সবার। বললাম, ‘কষ্ট হচ্ছে কিছু ?’ তিনি বললেন, ‘কি – কি করতে পারবে তুমি ? চুপ করে থাকো।’ একজন ডাক্তার জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি রকম কষ্ট হচ্ছে আপনার ?’ গুরুদেব স্নিগ্ধ হাসি হেসে বললেন, ‘এর কি কোনো বর্ণনা আছে ?’

দুপুর হতে গুরুদেব আবার আচ্ছন্ন হয়ে পড়লেন। সারারাত এভাবেই কাটল। বিধানবাবু এসেছিলেন। গুরুদেবের খুব হিক্কা উঠছে, মাঝে মাঝে কাসিও আসছে । শান্তিনিকেতনে ফোন করা হল বোঠানকে এখানে চলে আসবার জন্য। কাল রাত্রে গুরুদেবের অবস্থা সংকটজনকই ছিল। আজ যেন একটু ভালো ; মানে ওষুধ বা কিছু খাওয়াতে গেলে যে বিরক্ত হচ্ছেন – সেটা বুঝিয়ে দিচ্ছেন। দুপুর হতে আবার অন্য দিনের মতো আচ্ছন্ন হলেন। সন্ধের ট্রেনে শান্তিনিকেতনের ডাক্তারবাবুকে নিয়ে বোঠান এলেন।  বোঠানের শরীরের অবস্থাও খুব খারাপ। রাতটা গুরুদেবের ভালো কাটল না মোটেই।

৪ আগস্ট । ভোরবেলা অল্পক্ষণের জন্য গুরুদেব একটু-আধটু কথা বললেন। ডাকলে বা কিছু খেতে বললে সাড়াও  দিলেন; কিন্তু এর বেশি কিছু নয়। সকালে একবার ফিডিং কাপে করে মুখে কফি ঢেলে দিলাম, বেশ চার আউন্সের মতো কফি খেলেন। বোঠান এসে গুরুদেবের কানের কাছে মুখ নিয়ে ডাকলেন, ‘বাবামশায়, আমি এসেছি – আমি বউমা- বাবামশায় !’ গুরুদেব বুঝতে পারলেন। একবার চোখ দুটি জোর করে টেনে বোঠানের দিকে তাকালেন আর মাথা নাড়লেন।
ডাক্তাররা দু-বেলাই আসছেন যাচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে দু-তিনজন ডাক্তার  দিনরাত বাড়িতেই থাকছেন। রাত্রি সাড়ে দশটার সময়ে একবার খুব ভয় হল গুরুদেবের অবস্থা দেখে। তখুনি ইন্দুবাবুকে  (ডাক্তার ইন্দুমাধব বসু)   ফোন করে আনানো হল। ওষুধ পথ্য সবই তো নিয়মমত পড়ছে কিন্তু রোগের উপশম কই? রোজই কিছু-না-কিছু একটা নতুন উপসর্গ জুটছে। জ্বরও বেড়েই চলেছে, ক্রমেই গুরুদেব দুর্বল হয়ে পড়ছেন। রাত এগারোটার সময় একবার ডান হাতখানি তুলে আঙুল ঘুরিয়ে আবছা স্বরে বললেন, ‘কি হবে কিছু বুঝতে পারছি নে- কি হবে।’


৫ আগস্ট । সারাদিন গুরুদেব সেই একই রকম অবস্থায়। সন্ধেয় সার্ নীলরতনকে নিয়ে বিধানবাবু এলেন। আজ আর ডাকলেও গুরুদেবের কাছ থেকে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। সার্  নীলরতন গুরুদেবের পাশে বসে তাঁকে দেখলেন, তাঁর অবস্থা শুনলেন অন্য ডাক্তারদের কাছ থেকে। কিছু বললেন না। যতক্ষণ সার নীলরতন গুরুদেবের পাশে বসে ছিলেন সারাক্ষণ গুরুদেবের ডান হাতখানির উপর তিনি হাত বুলোচ্ছিলেন। যাবার সময়ে সার নীলরতন গুরুদেবের মাথার কাছ পর্যন্ত এসে একবার ঘুরে দাঁড়ালেন, গুরুদেবকে আবার খানিক দেখলেন, তার পর দরজা পেরিয়ে বাইরে চলে গেলেন। কি তাঁর মনে ছিল কি জানি! কিন্তু যাবার সময়ে তাঁর ঘুরে দাঁড়িয়ে গুরুদেবকে আর-একবার দেখে নেবার সেই ভঙ্গিটির মানে যেন অতি স্পষ্ট হয়ে গেল আমাদের কাছে। রাত্রে স্যালাইন দেওয়া হল গুরুদেবকে। অক্সিজেনও আনিয়ে রাখা হয়েছে। নাকটি কেমন যেন বাঁ দিকে একটু হেলে গেছে, গাল-দুটি ফুলেছে, বাঁ চোখ ছোটো ও লাল হয়ে গেছে। পায়ের আঙুলে ও হাতের আঙুলে ঘাম ঘাম মতো হচ্ছে। ললিতবাবু আজ অপারেশনের একটা সেলাই খুলে দিয়ে গেলেন দিনের বেলা।

৬ আগস্ট । সকাল হতে বাড়ি লোকে লোকারণ্য। গত কয়দিন হতেই লোকজনের ভিড় চলছিল কিন্তু আজ আর ঠেকিয়ে রাখা যাচ্ছে না কাউকে। আজ আবার পূর্ণিমা, আজকের দিনটা যদি কোনোরকম করে কেটে যায় তবে হয়তো ভরসা পাওয়া যাবে। কিন্তু সে ভরসাই যে কম। গুরুদেব এক-একবার খুব জোরে কেসে উঠছেন। থেকে থেকে হিক্কাও সমানে চলেছে। আজ আর গুরুদেবের কোনো সাড়াশব্দ নেই। সকালে বোঠান একবার গুরুদেবের কানের কাছে মুখ নিয়ে ডাকলেন, বাবামশায় – বাবামশায় – বাবামশায় –  বাবামশায়। গুরুদেব একবার সাড়া দিলেন এবং তাকালেন। কাল রাত থেকে অনেক সময়ে তাকিয়ে থাকেন, যেন কোথায় তাকিয়ে আছেন বোঝা যায় না।  এক-একবার দু ভুরু কুঁচকে আসে, সেটা ব্যথার বা আর-কিছুর  –  কি জানি। এখন দুপুর বারোটা, এখনো সেই একই অবস্থা। মুখে জল বা ফলের রস একটু একটু দেওয়া হচ্ছে কিন্তু বেশি দিতে ভয় হয় কখন হিক্কা উঠবে আর বিষম লাগবে। কাসিও আছে খুব। বিকেলও কাটল একই ভাবে। সন্ধে হতে অনেকেই গুরুদেবের ঘরে এসে তাঁকে দেখে যেতে লাগলেন। বর্ণকুমারী দেবী ভাইকে দেখতে এসে রাত্রে এখানেই রয়ে গেলেন। একবার করে বর্ণকুমারী দেবী কাঁপতে কাঁপতে এ ঘরে আসেন ভাইকে দেখতে সামনে আর আসতে পারেন না, গুরুদেবের মাথার কাছ হতেই ফিরে যান, আবার আসেন। গুরুদেবের শিয়র বরাবর বাইরে পুবের আকাশে পূর্ণিমার ভরা চাঁদ। গুরুদেবের পায়ের কাছে বসে দেখি পরিপূর্ণ ছবি একখানি। এই ছবিখানি যেন আজকের জন্যই দরকার ছিল। এমনটিই হবার কথা ছিল। রাত বারোটায় গুরুদেবের অবস্থা খুব অবনতির দিকে গেল।

৭ই অগস্ট । ১৯৪১ সাল শ্রাবণ মাসের ২২শে আজ। ভোর চারটে হতে মোটরের আনাগোনা জোড়াসাঁকোর সরু গলিতে। নিকট আত্মীয় বন্ধু পরিজন প্রিয়জন সব আসছেন দলে দলে। পুবের আকাশ ফরসা হল। অমিয়াদি চাঁপাফুল অঞ্জলি ভরে এনে দিলেন। সাদা শাল দিয়ে ঢাকা গুরুদেবের পা-দুখানির উপর ফুলগুলি ছড়িয়ে দিলাম। বেলা সাতটায় রামানন্দবাবু গুরুদেবের খাটের পাশে দাঁড়িয়ে উপাসনা  করলেন । শাস্ত্রীমশায় পায়ের কাছে বসে মন্ত্র পড়লেন –

 বাইরের বারান্দায় ধীরে ধীরে মৃদু কণ্ঠে কে যেন গাইছেন গান- কে যায় অমৃতধামযাত্রী চেষ্টা করেও নিজেকে সামলে রাখা যাচ্ছে না।
বেলা নয়টায় অক্সিজেন দেওয়া শুরু হল। নিশ্বাস সেই একই ভাবে পড়ছে। ক্ষীণ শব্দ নিশ্বাসে। সেই ক্ষীণ শ্বাস ক্ষীণতর হয়ে এল। গুরুদেবের দু-পায়ের তলায় দু-হাত রেখে বসে আছি। পায়ের উষ্ণতা কমে আসতে লাগল । বেলা দ্বিপ্রহরে বারোটা দশ মিনিটে গুরুদেবের শেষ নিশ্বাস পড়ল।

বাইরে জনতার দারুণ কোলাহল। তারা শেষবারের মতো একবার দেখবে গুরুদেবকে। সাদা বেনারসী-জোড় পরিয়ে সাজানো হল। কোচানো ধুতি, গরদের পাঞ্জাবি, পাট-করা চাদর গলার নীচ থেকে পা পর্যন্ত ঝোলানো, কপালে চন্দন, গলায় গোড়ে মালা, দু পাশে রাশি রাশি শ্বেতকমল রজনীগন্ধা। বুকের উপরে রাখা হাতের মাঝে একটি পদ্মকোরক ধরিয়ে দিলাম। দেখে মনে হতে লাগল যেন রাজবেশে রাজা ঘুমচ্ছেন রাজশয্যার উপরে। ক্ষণকালের জন্য যেন সব ভুলে তন্ময় হয়ে রইলাম। একে একে এসে প্রণাম করে যেতে লাগল নারীপুরুষে। ব্রহ্মসংগীত হতে লাগল এক দিকে শান্তকণ্ঠে। ভিতরে উঠোনে নন্দদা সকাল থেকে তাঁর নিজের কাজ করে যাচ্ছিলেন। নকশা এঁকে মিস্ত্রি দিয়ে কাঠের পালঙ্ক তৈরি করালেন। গুরুদেব যে রাজার রাজা, শেষ-যাওয়াও তিনি সেইভাবেই তো যাবেন ।


তিনটে বাজতে হঠাৎ এক সময়ে গুরুদেবকে সবাই মিলে নীচে নিয়ে গেল। দোতলার পাথরের ঘরের পশ্চিম বারান্দা হতে দেখলাম –  জনসমুদ্রের উপর দিয়ে যেন একখানি ফুলের নৌকা নিমেষে দৃষ্টির বাইরে ভেসে চলে গেল ।

শ্রীমতী রানী চন্দের লেখা থেকে সংকলিত

Please rate this

Join the Conversation

3 Comments

  1. সংগ্রহে রাখলাম।
    অনেক অনেক ধন্যবাদ ।
    আমার প্রণাম নেবেন।

  2. যতবার পড়ি ততবারই চোখের সামনে ছবির মত সব যেন ভেসে ওঠে। প্রণাম সেই মহামানবকে।

  3. অনির্বচনীয় অনুভূতি হলো। সংগ্রহে রাখলাম।

Leave a comment

Leave a Reply to Ajanta Sinha Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *