গান গেয়েছিলেম No ratings yet.

স্থান শান্তিনিকেতন। 
একদিন এক রাতে তিনি ডেকে পাঠিয়েছেন এক নবীন সাহিত্যিককে। নবীন তখন মশারির মধ্যে ঘুমের আয়োজনে ব্যস্ত। এদিকে তিনি ডেকে পাঠিয়েছেন, তাই তড়িঘড়ি করে প্রায় দৌড়তে দৌড়তে এসে তাঁর সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই তিনি বললেন,‘বোসো’। অনুমতি পেয়ে নবীন সাহিত্যিক তাঁর মুখোমুখি বসলেন। মুখে কোনো কথা নেই তাঁর।তিনি ফের বললেন,‘তুমি আমার গান শুনবে?’একথা শুনে নবীন সাহিত্যিক খুবই আশ্চর্য হলেন। কিছু বলার আগেই তিনি বললেন,‘আমি এখনও গান গাইতে পারি।’ বিস্ফোরিত চোখে নবীন চেয়ে রইলেন।তিনি আরো বললেন,‘তবে কি জানো, এখন আস্তে আস্তে গুনগুন করেই গাই। বলো তো শুনিয়ে দিতে পারি।’একথা শোনার পর নবীনের অন্তর গভীর বেদনায় অসাড় প্রায়। কি বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না। ভাবছেন যাঁর গান শোনার জন্য একদিন সারা দেশের মানুষ আকুল হত, আবেদন করত, আজ কিনা তিনিই স্বয়ং যেচে গান শোনানোর জন্য এমন কাতর হচ্ছেন!নবীন অত্যন্ত নম্র কন্ঠে বললেন,‘ ডাঃ যে নিষেধ করেছেন আপনাকে গান না করতে !’বললেন ঠিকই কিন্তু নবীন নিজেই বুঝলেন ঠিক হল না তাঁকে একথা বলা। আঘাত পেতে পারেন, তাই পরক্ষণে বললেন,‘আপনার কষ্ট হবে না তো !’একথা শুনেই তিনি বলে উঠলেন,‘কোন গানটা শুনবে বলো!’নবীন ভাবলেন কোন গানই বা বলি। তারপর বিনীতভাবে জানালেন,‘ আপনার যেটি খুশি। আমি আর কি বলব!’তিনি শুরু করলেন গাইতে….এ সেই গান, যা কিনা একসময়ে তিনি কত গেয়ে বেড়িয়েছেন, যে গানে তিনি নিজে অফুরান আনন্দ পেয়েছেন আর অন্যদের ততোধিক আনন্দ দিয়েছেন, এ সেই ১৯০৫ সালের ফেলে আসা দিনের গান। আজকাল তাঁর শেষ বয়সের গান গাইতে ইচ্ছে করে না। প্রথম জীবনের গান অক্লেশে গেয়ে যেতেন, সমস্ত কথা, সুর, মনের আয়নায় ভেসে উঠত। নবীন চুপটি করে মুদ্রিত নয়নে শুনছেন তিনি গাইছেন…‘সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে…’গান শেষ হতেই দু-জনে চুপ করে রইলেন কিছুক্ষণ।

সার্থক জনম আমার

এই মজলিশি গল্পটি আজ বাঙালি পাঠকের কাছে আজ খুব অপরিচিত নয়। গল্পের দুই কুশীলব যথাক্রমে রবীন্দ্রনাথ এবং নবীন সাহিত্যিক বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়, বনফুল।সেই ঘটনার কথা বনফুলই লিখেছিলেন,‘মনে হয়েছিল যেন একটি তীক্ষ্ণ-কন্ঠ ভ্রমর সুরের অদ্ভুত মায়ালোক সৃজন করে গেল।’আমরা যাঁরা কবিকে দেখিনি, শুধু তাঁর গল্প শুনেছি অতীতের নানা স্মৃতিকথার পাতায়, তাঁদের কি কোনো ধারণা আছে রবীন্দ্রনাথের গায়ক সত্ত্বাটি আসলে কেমন ছিল! ভাবলে আশ্চর্য লাগে ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির আগে পর্যন্ত তাঁর কবিসত্ত্বার খ্যাতি অপেক্ষা গায়কসত্ত্বার খ্যাতি বেশি ছিল। অথচ আজ কী দুর্ভাগ্যের কথা সেই গায়করূপী রবীন্দ্রনাথকে পরবর্তী প্রজন্ম সঠিকভাবে চিনলই না। তাঁর লেখা কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, নাটক, উপন্যাস, গান মায় ছবিও যথাসম্ভব সংরক্ষণ করা গেলেও তাঁর কন্ঠটি মর্যাদা সহকারে সংরক্ষিত হল আর কই। অথচ ১৯০৫ সালের পর বিভিন্ন সময়ে কবিকন্ঠের রেকর্ড যে করা হয়নি তা তো নয়। শুধু তো গানই নয়, কবিতাও আবৃত্তি করে রেকর্ড করেছেন। সঙ্গে অসংখ্য বক্তৃতা দিয়েছেন দেশে বিদেশে, তবু গান ও কবিতা মিলিয়ে মাত্র ৭৫টি রের্কড করা হয়েছিল, এরমধ্যে গানের সংখ্যা হল ৩২টি। বিদেশেও রেকর্ড হয়েছিল তাঁর কবিতা এবং বক্তৃতা, অথচ সেগুলিও দু-একটি জায়গা ছাড়া সঠিক পদ্ধতিতে সংরক্ষিত হয়নি। আজ  পরবর্তী প্রজন্ম রবীন্দ্রনাথের যে কন্ঠটি শুনতে পান সেটির সঙ্গে কবির কন্ঠের কি কোনো মিল বা সাদৃশ্য আছে ? তবে ইতিহাস বলছে রবীন্দ্রনাথের কন্ঠ নানা সময়ে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ তাঁর কন্ঠ কেমন ছিল তা সে আমলের কয়েকজনের স্মৃতিকথা থেকেই বোঝা যায়। যেমন, ১৯০৮ সালে রবীন্দ্রনাথের ডাক পেয়ে কাশী থেকে ক্ষিতিমোহন সেন বিশ্বভারতীর ব্রহ্মাচর্যাশ্রমে যোগ দিতে আসছেন। ট্রেন থেকে বোলপুর স্টেশনে নেমেই অবাক হয়েছিলেন। লিখলেন সে কথা,‘স্টেশন হইতে নামিয়াই শুনিলাম কবি গাহিতেছেন, ‘তুমি আপনি জাগাও মোরে’।’ ক্ষিতিমোহন তো রীতিমতো অবাক।

‘কী শক্তিই তাঁহার কন্ঠে ছিল। শান্তিনিকেতনে তাঁহার দেহলী নামক গৃহের দোতলায় দাঁড়াইয়া তিনি গাহিতেছেন আর বোলপুরে তাহা শুনা যাইতেছে।’ তখন অবশ্য বোলপুরে আজকের মতো এত জমজমাট টোটো রিক্সা ভ্যান মোটরবাইক বা সাইকেলের দৌরাত্ম্য ছিল না। শুধু কি শক্তিই ছিল তাঁর কন্ঠে??  ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরা দেবী চৌধুধানী তো তাঁর রবিকা’র কন্ঠের সম্বন্ধে এমন বলেছিলেন,‘ভগবদ্দত্ত সুকন্ঠের অধিকারী ছিলেন। প্রথম বয়সে তিন মধ্যমে, বা পঞ্চমে ছাড়া কখনো গান ধরতেন না এবং অবলীলাক্রমে তার-সপ্তকের ‘নি’ পর্যন্ত গলা চড়াতে পারতেন।’ যদিও সাধারণত সাধারণ গায়ক-গায়িকাদের গানে বড়জোর দেড় সপ্তকের বেশি লাগে না। যাঁরা সেকালে তাঁর ‘অনন্তসাগর মাঝে’ বাগেশ্রীর গান শুনেছেন, তারা ইন্দিরা দেবীর কথার সমর্থন করবে বলে ইন্দিরার ধারণা। অথচ এই স্মৃতিচারণ থেকে মনে মনে কল্পনা করা ছাড়া আজ রবীন্দ্রপ্রেমীদের কাছে আর কোনো বিকল্প নেই।

সত্যিই বড়ো কষ্টের! আজকাল কবিকন্ঠের কিছু রেকর্ড শুনে রবীন্দ্রানুরাগীরা খুবই হতাশ হন। মনে হয় মেয়েলি গলার স্বর ছিল তাঁর। বেশ কয়েকবার কবির কন্ঠ চোট পায়, পাশাপাশি তারপর থেকে তাঁর অস্থিরতা বেড়ে যায়। তখন রবীন্দ্রনাথের বয়স তেইশ – চব্বিশ বছর। ১৮৯৩ সালের ঘটনা। কলকাতার বিডন স্কোয়ার। সেবছর অক্টোবর মাসে একটি জনসভা হচ্ছে। রবীন্দ্রনাথকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। যুবক কবি গেছেন। সভার সভাপতি স্বয়ং সাহিত্যসম্রাট, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। প্রায় দীর্ঘ দেড়ঘন্টা ধরে তিনি ‘ইংরেজ ও ভারতবাসী’-র উপর নাগাড়ে বক্তৃতা দিলেন। বক্তৃতা থামতেই উপস্থিত শ্রোতারা ছেঁকে ধরলেন তাঁকে। গায়ক রবীন্দ্রনাথের তখন রমরমা বাজার। যেখানেই যান, তা পারিবারিক সভায়, ব্রাহ্মসমাজে, সভাসমিতিতে, সর্বত্রই তাঁকে গান গাইবার জন্য অসংখ্য অনুরোধ শুনতে হয়। সেবারও সকলে সমস্বরে বলতে লাগলেন গান গাইতে হবে। কী মুশকিলের কথা! টানা দেড়টি ঘন্টা বক্তৃতার পর কিনা গান শোনাতে হবে ! কবি তখন রীতিমতো পরিশ্রান্ত। গান পরিবেষনের উপযোগী তখন কন্ঠও নয়। মেজাজও ঠিক ছিল না। খুবই স্বাভাবিক। এমতাবস্থায় শেষে সভাপতি, বঙ্কিমচন্দ্রের অনুরোধ ও হস্তক্ষেপে তিনি নিরুপায়। গান গাইতেই হল। এবং সেইসময়ে সেই সভায় অর্থাৎ বত্রিশ বছর বয়সে তাঁর কন্ঠস্বর হঠাৎই জখম হল। সেই সুখ্যাত কন্ঠস্বর আর ফিরে পেলেন না তিনি, চিরতরে তা কালের গহ্বরে হারিয়ে গেল।

কী মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, আজ ভাবলে অবাকই হতে হয়।কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ এই ঘটনায় চূড়ান্ত হতাশ হয়েছিলেন, ‘এবারকার অত্যাচারে গলা এমন জখম হল যে, তা আর কখনো সম্পূর্ণ সেরে উঠল না।’ যদিও এরপর কিছুদিন সিমলায় গিয়ে থেকেছিলেন, হাওয়াবদল ও বিশ্রাম পেলে যদি কন্ঠ সেরে ওঠে, ‘কিন্তু তাঁর সেই গানের গলা আর ফিরে পেলেন না।’  সম্প্রতি প্রাজ্ঞজন সুধীর চক্রবর্তীর কাছে রবীন্দ্রনাথের গায়ক পরিচিতির প্রসঙ্গে এক নিভৃত আলোচনায় তিনি বললেন, ‘ভাবীকালের জন্য শুধু সেইসময়কার রবীন্দ্র-সুহৃদদের স্মৃতিকথাই একতম আশ্রয়।’ এ যেন দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মত দীনতা। 

রবীন্দ্রনাথের কন্ঠ জখম হবার ব্যাপারেও নানা মুনির নানা মত। কালিদাস নাগ কবির মুখেই শুনেছিলেন যে ওই বিডন স্কোয়ারের সভার তিন বছর পর ১৮৯৬ সালে নাকি কলকাতা কংগ্রেসে কবিকে গান গাইতে হয়েছিল। সেইসভায় ‘তাঁর গন্ধর্ব-লাঞ্ছিত কন্ঠস্বরের উপর অত্যাধিক চাপে খুব ক্ষতি হয়েছিল।’ একবার শান্তিনিকেতনে আমি পুলিনবিহারী সেনের বাড়িতে গিয়েছি। পুলিনদাদু (সম্পর্কে তিনি আমার দাদু হতেন) ইন্দিরা দেবীচৌধুরাণীর কাছে শুনেছিলেন লোকেন পালিতের স্মরণ উপাসনায় গান গাইবার সময়ে হঠাৎ তাঁর গলা যায় ভেঙে। এটি ১৯১৫ সালের কথা। অর্থাৎ কবির তখন বয়স চৌষট্টি বছর। কন্ঠ ভাঙার পরও কিন্তু তাঁর কন্ঠরোধ হয়নি। ধীরে ধীরে গান গাওয়ার ক্ষমতা ক্ষয় হয়ে এলেও কিন্তু গান গাওয়াও একেবারেই ছেড়ে দিতে পারছিলেন না। সভায় যেতেন কিন্তু গানের প্রস্তাব এলে ‘না’ বলতে কুন্ঠা হত তাঁর। এমনই একটি ঘটনা ঘটল ১৯২১ সালে। কলকাতায় কবি নির্দেশিত ‘বর্ষামঙ্গল’ হবে। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠান যখন শেষ হয়েছে হঠাৎ শ্রোতাদের মধ্যে থেকে একজন উঠে দাঁড়ালেন। তারপর হাতজোড় করে বললেন, ‘আজ এই সুধীজন সমাগমে আমার ভিক্ষার ঝুলি কি পূর্ণ হবে না?’ এ এক অবাক করা অনুরোধ। উপস্থিত সকলেই অবাক। সেইসময়ে উত্তরবঙ্গ ভয়াবহ বন্যার কবলে। সকলেই ভাবলেন সেখানকার দুর্গতদের জন্যই বোধহয় এই ভিক্ষা প্রার্থনা। কবি দাঁড়িয়ে বললেন, ‘আপনার আবেদন জানতে পারলে সাধ্যাতীত না হলে, আমি তা মেটাবার চেষ্টা করব।’ সেই শ্রোতা কবির এই ভরসা পেয়ে তখন জোড়হাত করেই বললেন, ‘আমি কবির নিজের কন্ঠের একটি গান শুনতে চাই।’ ভাবা যায় কি ধরনের আবদার। কবি কিন্তু এর আগে উদাত্ত কন্ঠে আবৃত্তি করেছিলেন। তাই জানালেন যে পশ্চিমে গিয়ে তাঁর কন্ঠ হারিয়ে এসেছেন, তবু তিনি গান শুরু করলেন, ‘আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার...’। 

আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার

এমনই অসহায় এবং নিরুপায় বারবার হতে হয়েছে তাঁকে তাঁর কন্ঠ নিয়ে। তাঁর কন্ঠে গান শোনার অভিজ্ঞতা নিয়ে সেই আমলে হেন কেউ নেই যে মধুর স্মৃতিচারণ করেননি। তা রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের কন্যা সীতা দেবীই হন কিংবা কবি সহচর অমল হোম বা চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ই হন। সমসাময়িক কবি নবীনচন্দ্র সেন বা অতুলপ্রসাদ সেন তো তাঁর কন্ঠে গান শুনে একেবারে মোহিত। তাঁর গানের গলাটি যে বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, এবার তা আর আগের মতো নয় এই দুঃখ তাঁকে বাকি জীবনে বহন করে যেতে হয়েছে। সেটি যে কী ভীষণ বেদনার সেকথার আঁচ পাওয়া যেত মাঝে মাঝেই। মাঝে মধ্যেই তিনি সেই অসহায়তার কথা আক্ষেপ করে বলতেনও। পুত্রবধূ প্রতিমা দেবীকে একবার বলেছিলেন, ‘আমার অল্প বয়সের সে গলা আর নেই, তোমাদের এখন কী আর শোনাব?’ প্রচ্ছন্ন অহং ছিল নিজের গলা সম্বন্ধে,‘পেয়েছিলুম বটে একটা গলার মতো গলা।’ তারপরই আফশোষ করেছেন, ‘কিন্তু ভগবান কেড়ে নিয়েছেন।…এখন কি আর গাইতে ইচ্ছে করে?…’একথা ঠিকই তখন তিনি মধ্যমে ছেড়ে দিতে পারতেন সুর, পাখির মতো সে সুর উড়ে চলত ধাপে ধাপে পর্দায় পর্দায়। ‘এখন কি আর গলার সে অবাধ গতি আছে যে গাইতে ইচ্ছে করবে?’ ঠিকই।

কৃষ্ণনগরে যখন প্রথম চৌধুরী তাঁদের বাড়িতে প্রথম রবীন্দ্রনাথের গান শুনেছিলেন তখন তাঁরও মনে হয়েছিল, ‘গলা ছিল তাঁর আশ্চর্য।’ পরে প্রথম চৌধুরী নিজেই স্বীকার করেছেন কন্ঠস্বরের এমন ঐশ্বর্য তিনি আর কোথাও শোনেননি। তুলনা করেছেন বিদেশি বাদ্যযন্ত্র কর্নেটের সঙ্গে, চেলোর সঙ্গে নয়। সঙ্গে ছিল অফুরান প্রাণের উচ্ছ্বাস, যাকে নিঃসন্দেহে বিশেষত্ব বলা যায়। অথচ এই মানুষটি জীবনের উপান্তে এসে কিনা বললেন, ‘আজকাল রবিঠাকুরের গান বলতে বোঝায় তার রচিত গান, গীত নয়। তোমরা আমায় এখন একবার গাইতে বলেও সম্মান দাও না। যখন গাইতুম তখন লিখতে শুরু করিনি তেমন, আর যখন লিখলুম তখন গলা নেই…!’ মঞ্চে, সভায়, মিটিং-এ ‘রবিঠাকুরের গান’ ‘রবিঠাকুরের গান’ এ চিৎকার এ ধ্বনি কেমন কালের ইতিহাসের কাছে তিলে তিলে হারিয়ে গেল, হারিয়ে গেছেও।

আজ তাই গায়ক রবীন্দ্রনাথ বলতে একটা শূন্যতাই আমাদের কাছে দাঁড়িয়ে। আমরা রবীন্দ্রনাথের অনেক কিছুই সংরক্ষণ করেছি, করতে পেরেছি, কিন্তু তাঁর অমন কন্ঠের ঐশ্বর্যকে চিরতরে হারিয়ে ফেলেছি। যে কন্ঠের প্রতি তাঁর অগাধ আস্থা ছিল, প্রেম ছিল, ভরসা ছিল, অহং ছিল জীবনের শেষ পর্যন্ত, এখন তাই দুধের স্বাদ ঘোলেই মেটে কতিপয় ভাঙা গলার গান আর কবিতা শুনে এবং পুরানো দিনের নানা স্মৃতিকথায়….তাই শান্তিদেব ঘোষের স্মৃতিকথা থেকে জানা যায় ১৯২২ সালে কলকাতায় বর্ষামঙ্গলের সময় হঠাৎই ঠান্ডায় তাঁর গলা বসে যায়। তারপর ওষুধপথ্য পাঁচন খাওয়ার পর তিনি একটি গান রচনা করে ফেলেছিলেন, যা কিনা ‘আমি যে গান গেয়েছিলেম মনে রেখো’র তাঁর চরম আকুতির বহিঃপ্রকাশ। তিনি সেদিন লিখলেন,‘আমার কন্ঠ হতে গান কে নিল’ !!

আমার কণ্ঠ হতে গান কে নিল

শ্রী পীতম সেনগুপ্ত

Please rate this

Join the Conversation

6 Comments

  1. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – এর নিজস্ব কণ্ঠস্বর সম্পর্কে বহুবছরের কৌতূহল নিবৃত্ত হল। ঋদ্ধ হলাম।

  2. কবিগুরুর সঙ্গীতশিল্পীসত্ত্বা সম্পর্কিত নানান অজানা, মর্মস্পর্শী তথ্য সম্বলিত আপনার আজকের ব্লগ এককথায় অনবদ্য।

  3. কবিগুরুর সঙ্গীতশিল্পীসত্ত্বা সম্পর্কিত নানা অজানা, মর্মস্পর্শী তথ্য সম্বলিত আপনার আজকের ব্লগ এককথায় অনবদ্য।

    1. শনিবারের ব্লগ পড়বার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করলে ভালো লাগবে।

  4. তথ‍্য সমৃদ্ধ লেখা। খুব ভালো লেখা। সমৃদ্ধ হলাম। শনিবারের ব্লগের লেখককে ধন‍্যবাদ।

  5. Shree Pritam Sengupta ke dhanyabaad.atyanto sulikhito o tathya samriddha sabcheye baro kathaa amon mormosparshi lekha upohar debar janyo.gayak rabindranather ajanaa kahini amar antato ato bisadbhabe jana chhilona.sradhaa o shubhechha janai.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *