কবির চিঠি জগদীশকে 4.25/5 (4)

একজন মানুষকে সঠিকভাবে চেনা যায় তার নিজস্ব জীবনপঞ্জি, ডায়ারি বা চিঠিপত্র থেকে। সেগুলি গভীরভাবে অনুসন্ধান করলে ব্যাক্তির মানসিকতা, চিন্তাধারার বৈচিত্র্য, ব্যক্তিত্ব, সহনশীলতা ও নানাবিধ চারিত্রিক দোষ-গুণের আভাষ পাওয়া যায়। চিঠিপত্রের মধ্যে দিয়ে যে রবীন্দ্রনাথকে আমরা আবিষ্কার করি তিনি কখনও বিষয়ী, সংসারী, আমাদের অনেক কাছের মানুষ, কখনও জটিল আত্মবিশ্লেষণের দার্শনিকতায় একেবারে অচেনা লোকের বাসিন্দা। আবার কখনও অম্লমধুর মন্তব্য, সরস টিপ্পনী, বিতর্ক, প্রাত্যহিক ঘটনাবলীর বিবরণ মাধ্যমেই আমাদের মনের আড্ডায় আসন পেতে বসেন। রবীন্দ্রনাথের কথায়, ‘যারা ভাল চিঠি লেখে তারা মনের জানালার ধারে বসে লেখে, আলাপ করে যায়— তার কোনও ভারও নেই, বেগও নেই, স্রোত আছে। এইসব চলতি ঘটনার’পরে লেখকের বিশেষ অনুরাগ থাকা চাই, তা হলেই তাঁর কথাগুলি পতঙ্গের মতো হালকা পাখা মেলে হাওয়ার উপর দিয়ে নেচে যায়। অত্যন্ত সহজ বলেই জিনিসটি সহজ নয়— ছাগলের পক্ষে একটুও সহজ নয় ফুলের থেকে মধু সংগ্রহ করা। ভারহীন সহজের রসই হচ্ছে চিঠির রস। সেই রস পাওয়া এবং দেওয়া অল্প লোকের শক্তিতেই আছে। পৃথিবীতে চিঠি লেখায় যারা যশস্বী হয়েছে তাদের সংখ্যা অতি অল্প। এবং অবধারিতভাবে রবীন্দ্রনাথ তাঁদের মধ্যে অন্যতম।

আগে থেকে পরিচয় থাকলেও, জগদীশচন্দ্র বসুর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের অন্তরঙ্গতার শুরু ১৮৯৭ সাল নাগাদ, খামখেয়ালী সভার অধিবেশনগুলিতে উপস্থিতির মধ্য দিয়ে। ক্রমে আড়াই বছরের বড় জগদীশচন্দ্রের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের প্রগাঢ় বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। পিতৃস্মৃতিতে রথীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘একজন বিজ্ঞানী, অন্যজন কবি, এঁদের মধ্যে যে আকর্ষণ ছিল সে কেবল বন্ধুত্ব বললে সম্পূর্ণ বলা হয় না । পরস্পরের মধ্যে একটি গভীর অন্তরঙ্গ সম্বন্ধ ছিল। কথাবাতা গল্প করার মধ্যে ভাব-বিনিময়ের চেষ্টা যেন সর্বদাই চলত। নতুন গল্পের প্লট বা যে প্রবন্ধ লিখছেন তার বিষয়বস্তু নিয়ে বাবা আলোচনা করতেন। জগদীশচন্দ্র তাঁর উদ্ভাবিত নতুন যন্ত্রের কথা বলতেন, নতুবা বলতেন জড় ও জীবের মধ্যে কি সব অদ্ভুত মিল তিনি সেই যন্ত্রের সাহায্যে আবিস্কার করেছেন। দুজনের চিন্তাধারা সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে চললেও তাঁরা যেন যথেষ্ট খোরাক পেতেন পরস্পরের কথাবার্তা আলোচনা থেকে’।

১৮৯৯ থেকে ১৯২৮ সালের মধ্যে জগদীশচন্দ্রকে লেখা রবীন্দ্রনাথের ৩৬টি চিঠি সংকলিত রয়েছে বিশ্বভারতীর প্রকাশিত চিঠিপত্র ৬ খণ্ডে। এগুলি মূলত জগদীশচন্দ্রের লণ্ডন-প্রবাসকালে লেখা, যখন তিনি সেখানে নিজের গবেষণায় মগ্ন। প্রত্যুত্তরে জগদীশচন্দ্রের চিঠিগুলি প্রবাসী পত্রিকার ১৩৩৩ সালের জ্যৈষ্ঠ-পৌষ  সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। চিঠিগুলির পরতে পরতে প্রকাশ পেয়েছে প্রিয় বন্ধুর প্রতি রবীন্দ্রনাথের গভীর ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর একজন বিজ্ঞান সাধকের সাফল্যের পথটিকে মসৃণ করবার যাবতীয় প্রচেষ্টা আর উৎকণ্ঠা। একই সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ নিঃসংকোচে লিখেছেন তাঁর পারিবারিক জীবনের নানা খুঁটিনাটি ঘটনা, ব্যাবসা-প্রচেষ্টা, শান্তিনিকেতনের স্বপ্ন, শিলাইদহের পদ্মা, নিজের সাহিত্যকর্ম, নিকটজনের মৃত্যু, শোক-আঘাত, এবং আরও কতকিছু। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে গিয়েছে জগদীশচন্দ্র তথা ভারতবর্ষের বিজ্ঞান সাধনার পতাকাটিকে  বিশ্বের দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত করবার  নিঃস্বার্থ  আকুলতা।

জগদীশচন্দ্র বোস

১৮৯৯ সালের মে মাস। জোড়াসাঁকোর বিচিত্রা বাড়ির দোতলায় অসুস্থ  বলেন্দ্রনাথ এবং পুত্র রথীন্দ্রনাথের রোগশয্যার পাশে বসে রবীন্দ্রনাথ দিনরাত  তাঁদের সেবা করে চলেছেন। আটত্রিশ বছরের রবির জীবন তখন কাটছে চুড়ান্ত ব্যস্ততায়। শিলাইদহের জমিদারি, শান্তিনিকেতনে নতুন বিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, গান-কবিতা-নাটক-গল্প-প্রবন্ধ রচনা, সভাসমিতি – দিনগুলি যেন ঝড়ের মত কেটে যাচ্ছে সৃষ্টির উত্তেজনায়। কিন্তু দুই আত্মজনের রোগপরিচর্য্যার ক্লান্তিতে আর নিজের অসুস্থতার কারণে লেখাপড়া ন্ধ আর অন্যান্য কাজকর্ম প্রায় বন্ধ হওয়ার মুখে। অন্তর্মুখী রবীন্দ্রনাথ যে দু’চারজন বন্ধুকে নিজের মনের কথা অকপটে বলতে পারতেন, জগদীশচন্দ্র তাদের মধ্যে অন্যতম। ২৬ শে মে’র চিঠিতে (পত্র ১)  সেই হতাশা প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘কতকগুলি পৌরাণিক গল্প আমার মস্তিষ্কের মধ্যে আশ্রয় লইয়াছে— যেমন করিয়া হৌক তাহাদের একটা গতি করিতে হইবে। তাহারা আমার কন্যাদায়ের মত, পাবলিকের সহিত তাহাদের পরিণয় সাধন করিতে না পারিলে তাহারা অরক্ষণীয়া হইয়া উঠিবে কিন্তু ইহাদের সম্বন্ধে ও বাল্যবিবাহটা ভাল নয়, উপযুক্ত বয়স পর্যন্ত ইহাদের কলরব ও উপদ্রব আমাকে সত্য করিতেই হইবে।’  রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে জগদীশচন্দ্রের শর্ত ছিল শিলাইদহে আসলেই তাঁকে একটা নতুন গল্প শোনাতে হবে। তাই জুন মাসে শিলাইদহ থেকে লিখলেন (পত্র ২), ‘সম্প্রতি ফিরিয়া আসিয়া আপনাদের সেই অর্দ্ধশ্রুত গল্পটিতে (চোখের বালি?) হাত দিয়াছি। কোনো একদিন সায়াহ্নে আপনাদের সেই কোণের ঘরে বসিয়া বোধ করি পড়িয়া শুনাইবার অবকাশ পাইব।’ শুধু গল্পই নয় সাহিত্যরসিক বন্ধুর জন্য রবীন্দ্রনাথ রচনা করেছেন কবিতা (বিজ্ঞান-লক্ষ্মীর প্রিয় পশ্চিমমন্দিরে, বন্ধু এ যে আমার লজ্জাবতী লতা), গান (মাতৃমন্দির পুণ্য অঙ্গন কর মহোজ্জ্বল, জয় তব হোক জয়), বক্তৃতা, প্রবন্ধ এবং আরও কতকিছু। উৎসর্গ করেছেন কথা (১৩০৬) ও খেয়া (১৩১৩) কাব্যগ্রন্থ, প্রকৃতির প্রতিশোধের ইংরাজি অনুবাদ (১৯১৭) ।

জুন মাসেই দার্জিলিংএর ঠিকানায় লেখা চিঠিতে (পরে ৩) জগদীশচন্দ্রকে  অকপটে জানিয়েছেন শিলাইদহে সন্তানদের গৃহশিক্ষক লরেন্সের পাগলামি, রেশম চাষের ব্যবসা, আর অন্যান্য চাষবাসের বিবরণ। অক্ষয়কুমার মৈত্র তাঁকে রেশমচাষে উদ্বুদ্ধ করবার জন্য কোন ‘কুক্ষণে ২০টি রেশমগুটি উপহার’ দিয়েছিলেন এবং তার ফলশ্রুতি কি হয়েছিল তার সরস বর্ণনা রয়েছে সেদিনের চিঠিতে। এছাড়াও লিখেছেন, ‘আমার চাষ-বাসের কাজও মন্দ চলিতেছে না। আমেরিকান ভুট্টার বীজ আনাইয়াছিলাম – তাহার গাছগুলা দ্রুত বেগে বাড়িয়া উঠিতেছে। মাদ্রাজি সরু ধান রোপণ করাইয়াছি, তাহাতেও কোন অংশে নিরাশ হইবার কারণ দেখিতেছি না।’ দেশীয় শিল্পের পুনঃপ্রবর্তন, শিলাইদহ কুঠিবাড়ির চারদিকের জমিতে ‘চাষ-বাসের কাজ’-এর মাধ্যমে ‘নিঃসহায় নিরুপায় নিতান্তনির্ভর-পর সরল চাষাভুষোদের’ দারিদ্র মোচনের জন্য রবীন্দ্রনাথের ভাবনার অন্ত ছিল না। নানা প্রতিকূলতা, আর্থিক লোকসান আর ব্যর্থতা রবীন্দ্রনাথকে নিরুৎসাহ করতে পারেনি।  

১৯০০ সালের আগস্ট মাসে, প্যারিসে ইন্টারন্যাশানাল কংগ্রেস অফ ফিজিসিস্ট আহূত সম্মিলনে ভারতের প্রতিনিধি হিসাবে আমন্ত্রিত হয়ে জগদীশচন্দ্র জড়বস্তুর প্রাণ সম্পর্কে প্রবন্ধ পাঠ করে বিজ্ঞানীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। যদিও তাঁর থিওরি বা তত্ত্ব নিয়ে প্রচুর বিতর্কও হয়েছিল। লন্ডন থেকে বন্ধুর চিঠি মারফৎ তার বিস্তারিত বিবরণ জেনে রবীন্দ্রনাথ প্রত্যুত্তরে (পরে ৪) লিখলেন, ‘তারপরে আপনি জয় করে এলে আপনার সেই বিজয়গৌরব আমরা বাঙ্গালীরা মিলে ভাগ করে নেব আপনি কি করলেন তা বোঝবার কিছু দরকার হবে না, না বুদ্ধি, না অর্থ, না সময় কিছুই খরচ করতে হবে না, কেবল টাইমস্ পত্রে ইংরেজের মুখ থেকে বাহবা শোনামাত্র সেই বাহবা আমরা লুফে নেব। তখন আমাদের দেশীয় কোন বিখ্যাত কাগজে বলবে, আমরা বড় কম লোক নই ; অন্য কাগজে বলবে, আমরা বিজ্ঞানে নব নব তথ্য আবিষ্কার করচি ;- এদিকে আপনার জন্যে কারো সিকি পয়সার মাথাব্যথা নেই, কিন্তু যখন জগৎ থেকে যশের ফসল ঘরে আনবেন তখন আপনি আমাদের ;– চাষের বেলা আপনি একা, লাভের বেলা আমরা সবাই ; অতএব আপনি জয়ী হলে আপনার চেয়ে আমাদেরই জিৎ।’ আসলে রবীন্দ্রনাথের নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা আর উপলব্ধির থেকেই এই ব্যঙ্গ আর ক্ষোভের প্রকাশ। পরবর্তীকালে অর্থের অভাবের ব্যায়বহুল গবেষণার কাজ যখন প্রায় বন্ধ হতে বসেছিল, কাজ অসমাপ্ত রেখে জগদীশচন্দ্র দেশে ফিরে আসবার কথা ভেবছিলেন, তখন একমাত্র রবীন্দ্রনাথই তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।

গবেষণাগারে জগদীশচন্দ্র

রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ত্রিপুরার মহারাজা রাধাকিশোর দেবমণিক্যের সখ্যতার কথা আমারা জানি। দুজনেই দুজনার গুণমুগ্ধ আর পরস্পরের প্রতি অসীম শ্রদ্ধাশীল। ১৯০১ সালে নিজের পরীক্ষালব্ধ তত্ত্বকে বিদেশের স্বীকৃতির জন্য জগদীশচন্দ্র বিলেত যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন কিন্তু অর্থাভাবই ছিল একমাত্র প্রতিবন্ধকতা। জগদীশচন্দ্র সেসময়ে Indian Office-এ কর্মরত, কিন্তু কতৃপক্ষ তাঁকে সবেতন ছুটি দিতে রাজি ছিলেন না। রবীন্দ্রনাথ বন্ধুর পাশে দাঁডিয়ে লিখলেন (পত্র ৫), ‘তোমার ক্ষতিপূরণের জন্য আমরা বিশেষ চেষ্টা করতে পারি। যেমন করিয়া হোক তোমার কার্য্য অসম্পন্ন রাখিয়া ফিরিয়া আসিও না’।

মনে রাখতে হবে, সে সময়ে রবীন্দ্রনাথ আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত। কিছু কর্মচারীর অসাধুতায়, বিশেষ করে বলেন্দ্রনাথের মৃত্যুর পরে, শিলাইদহের ‘ঠাকুর কোম্পানী’র ব্যবসা পথে বসলে জামিদার হিসাবে রবীন্দ্রনাথকে বিশাল ঋণের বোঝা বহন করতে হচ্ছিল। উপরন্তু বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষ, অন্যান্য ব্যবসার লোকসান, পারিবারিক অসুখবিসুখে সৃষ্টিশীল মানুষটি তখন একেবারে দিশাহারা। তারই মধ্যে, নিজের অহংকার বিসর্জন দিয়ে বন্ধুর জন্য হাত পাতলেন রাধাকিশোর দেবমানিক্যের কাছে। মহারাজা সানন্দে রাজি হয়ে বললেন, ‘জগদীশ এবং তাঁর কৃতিত্ব সম্বন্ধে আমি বিশেষ কিছুই জানি নে, আমি যা দেব, সে আপনাকেই দেব, আপনি তা নিয়ে কী করবেন আমার জানবার দরকার নেই।’ আমার হাতে দিলেন পনেরো হাজার টাকার চেক। সেই টাকা আমি আচার্যের পাথেয়ের অন্তর্গত করে দিয়েছি। সেদিন আমার অসামর্থ্যের সময় যে বন্ধুকৃত্য করতে পেরেছিলুম, সে আর এক বন্ধুর প্রসাদে।’

মহারাজা বীরচন্দ্র মাণিক্য

রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে মহারাজা রাধাকিশোরের সখ্যতাকে অনেকেই সন্দেহের চোখে দেখতেন। তারা ভাবতেন এতে রবীন্দ্রনাথের নিশ্চয়ই কিছু স্বার্থ রয়েছে। তাই মহিমচন্দ্র দেববর্মাকে লিখেছেন, ‘মহারাজের সহিত আমার প্রিয় সম্বন্ধ লোকচক্ষে হীন করিয়া তুলিতেছে। সেই সকল কারণে মহারাজের প্রতি আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা ও অনুরাগ সত্ত্বেও আমি ক্রমশঃ দূরে নির্লিপ্ত থাকিবার চেষ্টায় ছিলাম। কেবল জগদীশবাবুর কার্যে আমি মান অপমান অভিমান কিছুই মনে স্থান দিতে পারি না – লোকে আমাকে যাহাই বলুক এবং যতই বাধা পাই না কেন তাঁহাকে বন্ধনমুক্ত ভারমুক্ত করিতে পারিলে আমি কৃতার্থ হইব – ইহা কেবল বন্ধুত্বের কার্য নহে, স্বদেশের কার্য। সুতরাং ভিক্ষুভাবেই আমি এবার অসঙ্কোচে মহারাজের দ্বারে দাড়াইব’। জগদীশচন্দ্রের বিজ্ঞান সাধনার জন্য রবীন্দ্রনাথ কতটা মরিয়া ছিলেন তার জলন্ত প্রমান এই চিঠি।

১৯০১ সালের ২১ মের চিঠিতে (পত্র ১০) রবীন্দ্রনাথ জগদীশচন্দ্রের কাছে জানতে চেয়েছেন, ‘যদি পাঁচ ছ বৎসর তোমাকে বিলাতে থাকতে হয় তুমি তারই জন্যে প্রস্তুত হোয়ো, অনর্থক ভারতবর্ষের ঝঙ্কাটের মধ্যে এসে কাজ নষ্ট কোরো না। তুমি আমাকে একটু বিস্তারিত করে লিখে এই ৫-৬ বৎসর সেখানে থাকতে গেলে ঠিক কি পরিমাণ সাহায্য তোমার দরকার হবে। আমার কাছে লেশমাত্র সঙ্কোচন কোরো না। বৎসরে তোমাকে কত পরিমাণে দিলে তুমি বিনা বেতনে দীর্ঘ ছুটি নিতে পার আমাকে লিখো’। মনে রাখতে হবে সেই সময়ে রবীন্দ্রনাথ নানাভাবে ঋণগ্রস্থ। রবীন্দ্রনাথের বড় মেয়ে বেলা (মাধুরীলতা) বিয়ের ( ১১ জুন ১৯০১) বিশাল অংকের (দশ হাজার টাকা) পণ জোগাড় করতে রবীন্দ্রনাথের হিমশিম অবস্থা। বন্ধু লোকেন পালিতের কাছে ৫০০০ টাকা ঋণী। প্রায় নিঃসম্বল অবস্থায় স্ত্রীর গয়নাও বিক্রি করতে হয়েছিল শান্তিনিকেতনের বিদ্যালয়ের নানবিধ খরচের ধাক্কা সামলাবার জন্য। তা সত্বেও রবীন্দ্রনাথ নানা ভাবে অর্থ সংগ্রহ করে বন্ধুকে নিয়মিত পাঠিয়ে গিয়েছেন।

মাতৃমন্দির পুন্যঅঙ্গন

আগামী সংখ্যায় সমাপ্ত

Please rate this

Join the Conversation

1 Comment

  1. রবীন্দ্রনাথ যে কতখানি বন্ধুবৎসল ও বন্ধুসহায়ক ছিলেন – এইসব দিকগুলি তেমনভাবে আমাদের নজরে আসে না। কারণ তাঁর পত্রাবলী আমাদের অবহেলায় অগোচরে থেকে যায়। যেখান থেকে আমরা মানুষ রবীন্দ্রনাথকে চিনতে পারি। সেইসমস্ত জায়গা থেকেই তাঁর বিশেষ উল্লেখযোগ্য দিকগুলি তুলে এনে আমাদেরকে তাঁকে জানতে সহায়তা করে চলেছেন। এর জন‍্য আমরা কৃতজ্ঞ। আপনার ব্লগ রবীন্দ্রনাথকে জানতে ক্রমশঃ অমূল‍্য সহায়ক হয়ে উঠছে।
    ধন‍্যবাদ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *